Posts

Showing posts from November, 2023

বর্তমান কৃষি, জলবায়ু আর পারম্পরিক চাষ

Image
পারম্পরিক ব্যবস্থায় উৎপাদন স্থানীয় নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই চাষ টেকসই হয়। উৎপাদন, বন্টন সবই স্থানীয়ভাবে হতে পারে পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পুষ্টির সুযোগ পাওয়া একটি মৌলিক মানবাধিকার। তবুও বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য এবং বিশুদ্ধ জল পায় না। বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং ক্ষুধা ও অপুষ্টি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়। লক্ষ্য হল, প্রত্যেকের নিরাপদ, পুষ্টিকর এবং পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য টেকসই কৃষি এবং খাদ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কথা তুলে ধরা। তবে এই ‘দিবস’ ধুমধাম করে পালন করা হলেও, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তাই খাবারের অভাবও পূরণ হচ্ছে না। টেকসই কৃষি তো দূর অস্ত। উদাহরণ হিসেবে ভারতের অবস্থাই ধরা যাক— ভারত, জলবায়ু বদলের হিসেবে সপ্তম সবচেয়ে ঝুঁকি পূর্ণ দেশ। কাউন্সিল অন এনার্জি এনভায়রনমেন্ট অ্যা ন্ড ওয়াটারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারতের প্রতি চারটি জেলার মধ্যে তিনটি হল চরম জলবায়ু ঘটনার হটস্পট। এই জেলাগুলিতে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা, বন্যা ও তাপপ্রবাহের ক্রমবর্ধমান ঘটনা

টান পড়ছে ভূজলে

Image
সারা বিশ্বে ভূজলেই হ্য ৪০ শতাংশ কৃষিকাজ। ভূজল যেহেতু সীমিত, তাই বেশি তুলে ফেললে এই জল কমে যায় চাষে জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলের অভাব হলে চাষিদের ভূমির নিচের জল বা ভূজলের ওপর উপর নির্ভর করতে হয়। সারা বিশ্বে ৪০ শতাংশ কৃষি নির্ভর করে ভূজলের ওপর। ভূজল যেহেতু সীমিত, তাই সময়ের সঙ্গে এই জল কমে যায়। ভারতের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত পাঞ্জাব। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ভুজলের টান পড়ছে এই রাজ্যে। এখানকার চাষিদের বক্তব্য, দশ বছর আগে পাঞ্জাবের বেশিরভাগ এলাকায় ৯ থেকে ১২ মিটার গভীরতায় ভূজল পাওয়া যেত। এখন ভূজল ১৮ থেকে ২১ মিটারের মধ্যে পাওয়া যায়। রাজ্যটির বিভিন্ন অংশে সপ্তাহে মাত্র একবার সেচ খালের জল আসে— যেটা যথেষ্ট নয়। তাই এখানকার চাষি ভুজলের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ভূজল পেতে তাই প্রায়শই আরো গভীরে খনন করতে হয়। এটা শুধু ভবিষ্যতের চাষের সমস্যা তৈরি করছে তা নয়। ভূজল ব্যবহার করা খুবই ব্যয়বহুল। কিন্তু এই রাজ্যের চাষিদের হাতে কোনো বিকল্প নেই। ভূজলের তল নীচে নেমে যাওয়ায় শুধু ক্ষেতের মালিকরাই নয়, সকলেরই ক্ষতি। কারণ পানীয় জলের উৎসও ভূজল। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও তথৈবচ। বিশেষ করে বোরো মরশুমে চাষের জন্য এত

ফেরত আসছে বিষাক্ত ফসল

Image
২০২২ সালে অত্যাধিক কীটনাশক অবশেষ থাকায়, ভারত থেকে কৃষিপণ্যের ৬৭৫টি চালান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে আটকে দেওয়া হয় ২০১৮’র ডিসেম্বরে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক ভারতের কৃষি সামগ্রী রফতানি বাড়াতে একটি বিস্তৃত নীতি চালু করেছিল। এই নীতির লক্ষ্য ছিল, ভারতের কৃষি রফতানি দ্বিগুণেরও বেশি করা। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩০০০ কোটির কৃষি রফতানি বাণিজ্য ২০২২-এ ৬০০০ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু কীটনাশক এবং নানা রাসায়নিকের অবশেষ, ভারতের কৃষি রফতানির জন্য চিন্তার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে, উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক অবশেষের উপস্থিতির জন্য, বেশ কয়েকটি দেশ ভারতের কৃষিপণ্য নিতে অস্বীকার করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২২ সালে অত্যাধিক কীটনাশক অবশেষ থাকায়, ভারত থেকে কৃষিপণ্যের ৬৭৫টি চালান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে আটকে দেওয়া হয়। ২০২১ সালে একইভাবে ২১২টি চালান ইওরোপের দেশগুলি প্রত্যাখ্যান করেছিল। ভারতের জিরের সব থেকে বড় ক্রেতা চিন। ২০২১ সালে চিন কীটনাশক অবশেষের কারণে প্রায় ১৩ শতাংশ কম জিরে রফতানি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ কীটনাশকের কারণে আম, আঙুর, ঢ্যাঁড়শ, চিনাবাদাম, কারি পাতা, লঙ্কা এবং তেঁতুলের চা

নাড়া পুড়িয়ে মারণ গ্যাস

Image
নাড়া পোড়ালে কার্বন মনোক্সাইড, মিথেন, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, উদ্বায়ী জৈব যৌগ তৈরি হয় ‘কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি এবং পরিবেশ মন্ত্রক পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লির প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নাড়া পোড়ানো একেবারে বন্ধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য চারটি রাজ্যকে ক্রপ রেসিডিউ ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) প্রকল্পের অধীনে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ করছে’। এবছর অগস্টের সংবাদ পরিষেবায় আমরা একথা জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু নভেম্বরে এসে দেখা গেল— ৭ নভেম্বর অবধি পাঞ্জাবে ২২,৬৪৪টি নাড়া পোড়ানোর ঘটনার রেকর্ড করা হয়েছে, যা মোট ঘটনার ৯৩ শতাংশ। পাঞ্জাব ধানের খামারগুলিতে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ মেট্রিক টন নাড়া পোড়ানো হয়। এতে কার্বন মনোক্সাইড, মিথেন, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, উদ্বায়ী জৈব যৌগ তৈরি হয়। এই দূষণের এত প্রভাব যে, পাঞ্জাবে নাড়া পোড়ানো হলে দিল্লির মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বেশ কিছুদিন স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ রাখতে হয়। এবছরও কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। আগে দিল্লি এবং পাঞ্জাব সরকার একে অন্যকে দোষারোপ করত। কিন্তু এখন

জীবাশ্ম জ্বালানিঃ ব্যবহার বেড়েই চলেছে

Image
১৫১ টি দেশের সরকার কার্বন নির্গমন শূন্যে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছেই রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ সংস্থার (ইউএনইপি) একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বিশ্বে ২০৩০ সালের মধ্যে এর উৎপাদন দ্বিগুণ হতে পারে। ১৫১ টি দেশের সরকার কার্বন নির্গমন শূন্যে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও, জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন বেড়েই চলেছে। এর ফলে মানব জীবন এবং বিশ্বে জলবায়ু বদলের প্রভাব দ্বিগুণ হবে। ­ স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউট (এসইআই), ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্স, ইথ্রিজি, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট (আইআইএসডি) এবং রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি)’র প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে, দেশগুলিকে ২০৪০ সালের মধ্যে কয়লা উৎপাদন এবং তার ব্যবহার প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের তুলনায়, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ জীবাশ্ম তেল ও গ্যাস উত্পাদন কমানোর কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত ২০টি দেশের মধ্যে ১৭টি, নেট-জিরো বা কার্বন নির্গমন শূন্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে – এবং জীবাশ্ম জ্বালা

চন্দ্রাহত !

Image
সত্যি বুদ্ধিমান মানুষের কী দাপট – নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে চাঁদে, মঙ্গলে বাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে… লিখছেন সুব্রত কুণ্ডু চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ, ভারতের মহাকাশ অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারতবাসীর এই সাফল্যে মাতাল হওয়া স্বাভাবিক। চাঁদে জলের উপস্থিতি এর আগেই টের পেয়েছিল মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা। বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা, বিভিন্ন সময়ে তাদের গবেষণার মাধ্যমে অনুমান করেছেন, চাঁদের অন্ধকারময় দক্ষিণ মেরুর এবড়োখেবড়ো জমি আর গিরিখাতে, বিভিন্ন রূপে জল রয়েছে। তারই সন্ধানে বিভিন্ন দেশ সেখানে পৌঁছোনোর চেষ্টা করেছে। ভারত প্রথম দেশ যারা সফল হল। হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মিলে জল। আলাদা আলাদা থাকলে হাইড্রোজেন দাহ্য। প্রচুর তাপ উৎপাদনকারী। সূর্যের ৫৫ শতাংশ গ্যাস হল হাইড্রোজেন। আর অক্সিজেন মানুষসহ প্রাণীকূলের বেঁচে থাকার আধার। তাই জলের খোঁজ ! ভবিষ্যতের কথা ভেবে ! কারণ পৃথিবীর অবস্থা খুব ভাল নয়। চাঁদ কেন, অজানা সব কিছু নিয়ে বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণা চলুক। চাঁদে, মঙ্গলে মানুষ পাড়ি দিক। কিন্তু নিজেদের গ্রহের ফলিত সমস্যাগুলি নিয়ে আমরা কী করছি। বিজ্ঞান, গবেষণা বলছে, মানুষের অপরিসীম লোভে সমগ্র প্রাণ

বেচে খাওয়ার না বেঁচে থাকার অর্থনীতি

Image
একদিকে প্রকৃতিমুখী, সবার সঙ্গে হাতে হাত ধরে বেঁধে বেঁধে, বেঁচে থাকার অর্থনীতি। আর অন্যদিকে গুটিকয়েক মানুষের ধনকুবের হওয়ার জন্য সব বেচে খাওয়ার অর্থনীতি। কোনটা নেবেন পছন্দ আপনার... লিখছেন সুব্রত কুণ্ডু নতুন নতুন অতিমারি, পরিবেশ বিপর্যয়, আর্থিক মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি, জীবন-জীবিকার ক্ষতি, মানুষে মানুষে বিদ্বেষ, হিংসা এগুলি ইদানিংকালের খবরের বিষয়। চতুর্দিক থেকে আসা এইসব সমস্যার সঙ্গে জুঝতে প্রাণপাত করতে হচ্ছে। বেদম হয়ে পড়ছি আমরা। তাসত্ত্বেও মাথার ওপর ছাদ আর খাদ্যের সংস্থানের জন্য আরো জোরে দৌড়াতে হচ্ছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এজন্য আবার দায়ী করা হচ্ছে মানুষকেই। বিশ্বাস করানো হচ্ছে— এই ইঁদুর দৌড় নাকি মানুষেরই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একটু গভীরে গেলে অন্য নানা ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেটা হল, নিয়ত বাড়তে থাকা বিশ্বায়িত অর্থনীতি আমাদের ওপর জাঁকিয়ে বসেছে। সৃষ্টি করছে নতুন নতুন সমস্যা। পৃথিবীর প্রাণ সম্পদ খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখনও এর প্রবক্তা— যারা সংখ্যায় বেশি— যেমন আমাদের সরকারগুলি, অনর্গল বলে চলেছে বর্তমান ব্যবস্থা অনেকের ভাল করেছে। সমস্যার নানা অভিঘাতে বিপর্যস্ত হলেও এই ঢক্ক