বেচে খাওয়ার না বেঁচে থাকার অর্থনীতি

একদিকে প্রকৃতিমুখী, সবার সঙ্গে হাতে হাত ধরে বেঁধে বেঁধে, বেঁচে থাকার অর্থনীতি। আর অন্যদিকে গুটিকয়েক মানুষের ধনকুবের হওয়ার জন্য সব বেচে খাওয়ার অর্থনীতি। কোনটা নেবেন পছন্দ আপনার... লিখছেন সুব্রত কুণ্ডু

নতুন নতুন অতিমারি, পরিবেশ বিপর্যয়, আর্থিক মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি, জীবন-জীবিকার ক্ষতি, মানুষে মানুষে বিদ্বেষ, হিংসা এগুলি ইদানিংকালের খবরের বিষয়। চতুর্দিক থেকে আসা এইসব সমস্যার সঙ্গে জুঝতে প্রাণপাত করতে হচ্ছে। বেদম হয়ে পড়ছি আমরা। তাসত্ত্বেও মাথার ওপর ছাদ আর খাদ্যের সংস্থানের জন্য আরো জোরে দৌড়াতে হচ্ছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এজন্য আবার দায়ী করা হচ্ছে মানুষকেই। বিশ্বাস করানো হচ্ছে— এই ইঁদুর দৌড় নাকি মানুষেরই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একটু গভীরে গেলে অন্য নানা ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেটা হল, নিয়ত বাড়তে থাকা বিশ্বায়িত অর্থনীতি আমাদের ওপর জাঁকিয়ে বসেছে। সৃষ্টি করছে নতুন নতুন সমস্যা। পৃথিবীর প্রাণ সম্পদ খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখনও এর প্রবক্তা— যারা সংখ্যায় বেশি— যেমন আমাদের সরকারগুলি, অনর্গল বলে চলেছে বর্তমান ব্যবস্থা অনেকের ভাল করেছে। সমস্যার নানা অভিঘাতে বিপর্যস্ত হলেও এই ঢক্কানিনাদে আমরাও বিশ্বাস করছি, বিশ্বায়িত আর্থিক ব্যবস্থা ভালো। কিন্তু আমাদের অকর্মণ্যতার জন্য আমরা এর পুরো ফায়দা তুলতে পারছি না। সুকুমার রায়ের খুড়োর কলে ঝোলানো গাজর পেতে আমরা ঊর্দ্ধশ্বাসে দৌড়চ্ছি। গাজর অধরাই রয়ে যাচ্ছে। শুধু মানুষ নয় সমগ্র প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর এই অর্থনীতি।

এবার তাহলে একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায় থাকে— ভাল অর্থনীতি কী? এর সহজ উত্তর হল, প্রকৃতি এবং অন্য কারোর ক্ষতি না করে মানুষ তাদের চাহিদা পুরণ করতে পারে যে অর্থনীতিতে— সেটাই ভাল। গান্ধিজি এই অর্থনীতির উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘এই পৃথিবী আমাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট হলেও লাগামছাড়া লোভ মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়’। আর রবীন্দ্রনাথ ক্ষতিকর অর্থনীতির ফলাফল নিয়ে বলেছিলেন, ‘গ্রামে অন্ন উৎপাদন করে বহু লোকে, শহরে অর্থ উৎপাদন ও ভোগ করে অল্পসংখ্যক মানুষ; অবস্থার এই কৃত্রিমতায় অন্ন এবং ধনের পথে মানুষের মধ্যে সবার চেয়ে প্রকাণ্ড বিচ্ছেদ ঘটেছে। ওই বিচ্ছেদের মধ্যে যে সভ্যতা বাসা বাঁধে, তার বাসা বেশি দিন টিকতেই পারে না।’

পৃথিবীতে সব কিছু বেচে খাওয়ার এই অর্থনীতি শুরু হয়েছিল চতুর্দশ শতকের শেষের দিকে। এসময় ইউরোপের কিছু এলিট— হাতে হাত ধরে বেঁধে বেঁধে থাকা জনগোষ্ঠীকে ভেঙেচুরে— তাদের ব্যবসা বাড়াতে সচেষ্ট হল। তারা নানান দেশ দখল করে সেখানকার স্থানীয় অর্থনীতিকে তছনছ করে, মানুষদের দাস বানালো। এই দাসরা তাদের তথাকথিত প্রভুর জোর জুলুমে তুলো, চিনি, নীল ইত্যাদি তৈরি করতে শুরু করল, রফতানির জন্য। স্থানীয় মানুষেরা তাদের জনগোষ্ঠীর, একে অন্যের জন্য, প্রয়োজন মতো সামগ্রী তৈরি করতো। তার বদলে দাস হয়ে তারা বিশ্ব বাজারের উপযুক্ত সামগ্রী তৈরি করতে শুরু করল। শুরু হল বেচে খাওয়ার অর্থনীতির এক ঐতিহাসিক যাত্রা। ভারতে সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ঔপনিবেশিক শক্তির মাধ্যমে এই অর্থনীতির শুরুয়াৎ হল।

ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গে নানা ঘাত, প্রতিঘাত, লড়াই, সংগ্রাম, স্বাধীনতা পেরিয়ে আজ আমরা কী দেখছি। সব কিছুকে কেনাবেচার সামগ্রীতে পরিণত করে বেচে খাওয়ার অর্থনীতির কুশীলবেরা, ক্রমশ ধনী থেকে থেকে ধনকুবেরে পরিণত হয়েছে। বাজারী অর্থনীতিতে দেশি-বিদেশি বলে আর কিছু থাকল না। এখন বিশ্বের প্রথম ২৫ জন ধনকুবেরের ৩ জন ভারতীয়। আর আমরা লাভ ও লোভের এই অর্থনীতিকে আজও ইন্ধন জুগিয়ে চলেছি।

বিশ্ব বিক্রেতাদের এই বিরাট বিরাট কোম্পানিগুলিকে সরকার আমাদের টাকায় ভরতুকি দিচ্ছে। তাদের যা নয় তাই করার অনুমতি দিচ্ছে। এসবের কখনো নাম উদারীকরণ, কখনো পরিকাঠামো সংস্কার, কখনো বা বিশ্বায়ন… ইত্যাদি। যার লাভার্থী বড় কৃষি ব্যবসা, বড় প্রযুক্তি সংস্থা, বড় সংবাদপত্র, বড় তেল ব্যাপারি, বড় ব্যাংক, বড় ওষুধ কোম্পানি…।

একইসঙ্গে সরকার স্থানীয় কৃষি, স্থানীয় ব্যবসার ওপর প্রচুর ট্যাক্স বসিয়ে, নানা রকম নিয়ন্ত্রণ এনে ক্রমশ তাদের শেষ করে দিচ্ছে। দুটো আলাদা আলাদা নিয়ম তৈরি হচ্ছে। একটা স্থানীয় ব্যবসার জন্য। আর অন্যটা বিশ্বায়িত বেচে খাওয়ার অর্থনীতির জন্য। এ কাজে আমাদের সরকার এখন ‘বিশ্ব গুরু’। ২০১৪-১৫ সাল থেকে গত ৯ বছরে— বড় কোম্পানিগুলির ১৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ২২৬ কোটি টাকার ঋণ মুছে দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে। বেচে খাওয়ার এই কোম্পানি এবং ব্যবসা আজকের দিনে নতুন মহারাজ। তারাই সরকারের নীতি-নিয়ম নিয়ন্ত্রণ করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে।

লেনদেন, বিনিময়, কারবার, বিনিয়োগ - মানব সমাজের শুরুর সময় থেকে ছিল। কিন্তু এখন ব্যবসা ধর্মের পর্যায়ে চলে গেছে। সব কিছুই এখন ব্যবসার সামগ্রী। সব কিছুই কিনতে পাওয়া যায়। এ জন্য মাছ-মাংস, সবজি, চাল, ডাল, কারখানার সামগ্রী, এমনকী জলও বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে উড়ে বা ভেসে চলে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে মার্কিন দেশে যতটা গরুর মাংস আমদানি হয়েছে ঠিক ততটাই রফতানি হয়েছে। শুধু মার্কিন দেশ বা গরুর মাংস নয় বেশিরভাগ দেশ একই সামগ্রী আমদানি এবং রফতানি করছে।

বুরুন্ডি আফ্রিকার একটি দেশ। পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ। যাদের অন্যের সাহায্যে বেঁচে থাকতে হয়— তারাও তাদের কৃষি সামগ্রী চিন, ভারতসহ অন্যান্য দেশে রফতানি করছে। বুঝুন অবস্থা! ভারত ২০২২ সালে ৭৮ হাজার কোটি টন দুধ এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী আমদানি করেছে। আবার ওই একই বছরে রফতানি করেছে ৬৮ হাজার কোটি টন দুধ এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী। এদেশ চিনি উৎপাদনে স্বয়ম্ভর। অর্থাৎ বাইরে থেকে আমাদের চিনি কেনার দরকার পড়ে না। কিন্তু ২০২১ সালে আমরা ১২৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের চিনি আমদানি করেছি।

প্রশ্ন উঠতেই পারে এত আমদানি রফতানির হিসেব কেন? কারণ এই হিসেবের ওপর টিকে আছে বিশ্বায়িত বেচে খাওয়ার অর্থনীতি। একই সামগ্রী এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া— আর ফের নিয়ে আসার মধ্যে লুকিয়ে আছে— বিভিন্ন সামগ্রীর ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ আর অপরিসীম লাভ। কম পয়সার শ্রম এবং মাটির নীচের জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে, চলাচলের এই তথাকথিত ব্যবসা চলছে। এর ফলস্বরূপ, প্রকৃতি— বর্তমানে এক বছরে যতটা আমাদের দিতে পারে— তার দ্বিগুণ সম্পদ আমরা তার থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছি। তাকে শোষণ করছি। বেচে খাওয়ার এই অর্থনীতি বছরে তিন শতাংশ হারে বাড়ছে। এভাবে বাড়লে এর পরিধি ২০৪৩ সালে দ্বিগুণ এবং ২১০০ সালে ৭ গুণ হবে। একই সঙ্গে প্রকৃতি শোষণের হার বাড়বে আরো দ্রুত লয়ে। বেচে খাওয়ার অর্থনীতির এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করেছে দার্শনিক এডোয়ার্ড অ্যাবে। ক্যান্সার রোগে কোষকলার বৃদ্ধি খুব দ্রুত হারে বাড়ে। তা বলে কি আমরা ক্যান্সার চাই !

ইতিমধ্যেই ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জে (আইপিসিসি)’র ষষ্ঠ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে যে, ১৮৫০-১৯০০ সালের তুলনায় এখন বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা গড়ে ১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর ফলে জলবায়ু বদল আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। জীববৈচিত্র কমছে। প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ, বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয়, আর অসাম্য বাড়ছে। কোভিড-১৯ অতিমারি সহ অন্যান্য মহামারির উদ্ভবের জন্য দায়ী জলবায়ু বদল ও তার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল— বেচে খাওয়ার এই অর্থনীতির মাধ্যমে বেঁচে থাকার আধার যে প্রকৃতি— তার চরম শোষণ।

সরকারগুলি প্রাথমিক দায়িত্ব, সবার জন্য খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা। উল্টে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, নতুন আইন-কানুন বানিয়ে বেচে খাওয়ার এই অর্থনীতির মেশিনে তেল দিয়ে যাচ্ছে তারা। আপনি কী জানেন, কোভিডের সময়— যখন সব কিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল— তখন প্রথম বছরে এই মেশিনের মূল কারিগর ধন কুবেরদের লাভ বেড়েছিল ৩.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (এক ট্রিলিয়ন = ১ লক্ষ কোটি)। যে মেশিন দ্রুত জলবায়ু বদল করে ফেলেছে; যে মেশিন প্রকৃতির প্রাণসম্পদকে বিলুপ্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে; যে মেশিন চালানোর জন্য আজও সাড়ে চার কোটি দাসের দরকার পড়ে; অন্ধের মত সমাজ এবং প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংসকারী এই মেশিনে আমাদের পয়সা ঢেলে চলেছে সরকার।

এখন তাহলে আমাদের করণীয় কী? কী করতে পারি আমরা! এক কথায় অনেক কিছুই— যদি আমরা এই বেচে খাওয়ার অর্থনৈতিক মেশিনের চাকা উল্টোদিকে ঘোরানোর সংকল্প নিই। ভাবছেন কীভাবে? তবে সব কিছুতেই বিশ্বায়নকে নজর-আন্দাজ করে স্থানীয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। আর তখনই এটা করা সম্ভব যখন আমরা বুঝবো, বিশ্বায়িত এই মেশিন আমাদের সবারই বিরুদ্ধে কাজ করছে। প্রকৃতির প্রাণসম্পদকে ঠেলে দিচ্ছে অতল গহ্বরের দিকে।

এজন্য জন্য সংগঠিত হওয়া দরকার— যা গ্রেটা থুনবার্গের মতো কিশোর-কিশোরীরা বুঝতে পেরেছে। যেটা বুঝিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, গান্ধি। তাঁদের মত কে পুঁজি করে বিশ্বায়িত বেচে খাওয়ার মেশিনের চাকা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে স্থানীয়করণের দিকে। এটা বুঝতে হবে, এই মেশিন চালাচ্ছে পৃথিবীর এক শতাংশ মানুষ। আর যার ফল ভোগ করছে ৯৯ শতাংশ। এটাকেই উল্টে দিতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে, কেন এক শতাংশ মানুষ এর চালক? এর একটাই উত্তর হলো আমাদের অজ্ঞানতা। আমরা জানি এই এক ভাগ মানুষ খুবই শক্তিশালী। কিন্তু এটা আমরা জানি না যে, এই মেশিন কীভাবে তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। আমরা তো দূরের কথা, এই কোম্পানিতে যে লোকটি কাজ করে সেও খেয়াল করে না, তাদের কাজে কীভাবে প্রকৃতি শোষণ হচ্ছে। কীভাবে গরীব এবং ধনীদের মধ্যে ফারাক বাড়ছে।

এসব জানতে, আমাদের সবাইকে এই কাজে সক্রিয় কর্মী হতে হবে। আমাদের মন দিয়ে খুঁজে বার করতে হবে, কীভাবে বেচে খাওয়ার এই মেশিন প্রকৃতি এবং মানুষের ক্ষতি করছে। আর স্থানীয়করণ কীভাবে এই হিসেব উল্টে দিতে পারে। খুব কঠিন নয় এই খুঁজে দেখার কাজ। শুরু হতে পারে স্থানীয় উৎপাদক, তার উৎপাদনের স্থানীয় বিক্রেতা এবং স্থানীয় ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে। আমি নিশ্চিত এই কথাবার্তা শুরু হলে আপনি এবং আপনারা বৈশ্বিকের বদলে স্থানিকের প্রবক্তা হয়ে উঠবেন।

আর তারপর প্রাথমিকভাবে আমাদের দাবি হবে, বেশিরভাগ মানুষের খুশহালের জন্য সরকারকে বেচে খাওয়ার এই অর্থনীতিকে আমাদের টাকায় ভরতুকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আর প্রকৃতিকে অবাধ লুন্ঠনের অধিকার যে দেওয়া হয়েছে, তাও বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে ছোট এবং স্থানীয়কে গড়ে পিটে তুলতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর অর্থ স্থানীয় এবং ‘ছোট’ ক্ষেত্রকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করা। বৈচিত্রময় স্থানীয় কৃষিক্ষেত্রকে উৎসাহিত এবং সহায়তা করা। স্থানীয় কাজ, স্থানীয় বিনিয়োগ, স্থানীয়ভাবে শক্তির ব্যবস্থা, সম্পদে ব্যক্তির মালিকানার অধিকারের বদলে সবার ব্যবহারের অধিকার প্রতিষ্ঠা। স্থানীয় গণতান্ত্রিক এবং বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। এর সঙ্গে স্থানীয় সমাজ ও সংস্কৃতিকে বৃহত্তর স্বনির্ভরতার জন্য, সব রকম সহায়তা আর উৎসাহ দিতে হবে। ভবিষ্যতে আরো আরো অতিমারি এবং আরো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন যদি না হতে হয়, তবে ‘স্থানীয়’ই একমাত্র পথ।

এইভাবে তৈরি স্থানীয় আর্থিক ব্যবস্থা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এটা কোনো গল্পকথা নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে ‘স্থানীয়’র আন্দোলন। এখন সময় জেগে ওঠার, শোনার, বোঝার, শেখার ও কাজ করার। রাজনীতিবিদদের থেকে স্থানীয়’র অধিকার আদায় করার সময়। যারা এই পরিবর্তন করতে চান— এমন সাহসীদের বাছাই করার সময়। তাদেরকে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করতে দেওয়ার সময়। কারণ এটা বুঝে নেওয়ার দরকার— আমাদের কাছে রয়েছে প্রাণ বৈচিত্রে ভরপুর এই একটি মাত্র গ্রহ। হানাহানি বন্ধ করে নিজেদের মধ্যে ভাইচারা বজায় রেখে, একটি ভালো ও স্থানীয় ব্যবস্থা তৈরির জন্য উদ্যোগ গ্রহণের এখনই উপযুক্ত সময়।

ভেবে দেখুন আমাদের আশপাশটা কত সুন্দর হবে, যদি আমরা ছোট, সুস্থায়ী, বৈচিত্রময় এবং খাঁটি স্থানীয় ব্যবস্থাকে প্রস্ফুটিত হতে দিই। মনে রাখবেন, চলতি বেচে খাওয়ার বিশ্বায়িত অর্থনীতি অপরিহার্য নয়। এটা কৃত্তিম - মানুষের তৈরি। তাই মানুষই পারে এর চাকা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে।

বিশেষ নিবন্ধ, অর্থনীতি, জীবন-জীবিকা
৯ অগস্ট ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

রক্তচাপ কমায় টম্যাটো

সার থেকে ক্যান্সার

আচ্ছে দিন