গরমে কাজের ক্ষমতা কমছে

পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে তবে, প্রায় ৮০ কোটি মানুষের কর্মক্ষমতা অর্ধেক হয়ে যাবে। এবছর মার্চের ১ তারিখে, ওয়ান আর্থ জার্নালে এই বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এই লেখায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে কর্মীদের উপর বর্ধিত তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহের প্রভাব এবং এর ফলে তাদের শারীরবৃত্তীয় যে পরিবর্তন হচ্ছে তা অনুধাবন করার চেষ্টা হয়েছে ।

পর্যালোচনার রিপোর্টে গবেষকরা উল্লেখ করেছে, বাড়তি তাপমাত্রা ও তাপপ্রবাহের প্রভাব কমানোর সর্বোত্তম উপায় হল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)-এর অনুসারে, এল নিনোর কারণে এখন সারা পৃথিবী জুড়ে তাপপ্রবাহ এবং উষ্ণতা অনেকটাই বেড়েছে। ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলি কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং অন্ধ্র প্রদেশের রায়লসিমা এর শিকার।

গবেষকের দেখেছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে যারা কায়িক পরিশ্রম করে, তাদের শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। এতে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ে। জলের অভাব কিডনি বা বৃক্ক, মস্তিষ্ক এবং হৃৎপিণ্ডের উপর দীর্ঘমেয়াদী খারাপ প্রভাব ফেলে। এতে তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। আয় কমে, চিকিৎসার খরচ বাড়ে। জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।

জলবায়ু বদলের প্রভাবে, প্রতি বছর, ভারতসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে পুরুষদের থেকে নারী প্রধান পরিবারগুলির কৃষি থেকে আয়ের ক্ষতি বেশি হয়। পুরুষ-প্রধান পরিবারের তুলনায় নারী-প্রধান পরিবারগুলি তাপ প্রবাহের কারণে ৮ শতাংশ বেশি এবং বন্যার কারণে ৩ শতাংশ বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। একইভাবে, অল্পবয়সীদের (৩৫ বছরের কম বয়সী) নেতৃত্বে থাকা পরিবারগুলিও চরম আবহাওয়ার কারণে, তাদের কৃষি থেকে আয় কমার সম্ভাবনা বেশি দেখা গেছে।

রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর এই সমীক্ষার গবেষকদের মতে, এটি ঘটে কারণ নারী এবং অল্প বয়সীদের চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কম। গবেষণাপত্রটি, প্রথমবারের মতো ২৪টি দেশের থেকে সম্পদের অবস্থা, লিঙ্গ এবং বয়সের কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকা গ্রামীণ জনগণের তথ্য সগ্রহ করা হয়।

দ্য আনজাস্ট ক্লাইমেট নামে এই রিপোর্টে দেখা গেছে, যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বন্যার মতো জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে সব কটি দেশের পরিবারগুলির আয়ের ক্ষতি হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি গড় তাপমাত্রা মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তবে এই পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের আয় ৩৪ শতাংশেরও বেশি কমে। কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং নারী ও পুরুষের মধ্যে মজুরির পার্থক্য বিবেচনা করে, গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে যে, যদি এই পার্থক্য কমানো না হয় তবে আগামী বছরগুলিতে জলবায়ু বদল এই ব্যবধানকে আরো বাড়িয়ে দেবে।

মহিলারা অনেক বৈষম্যমূলক নিয়মের মুখোমুখি হয়। তাদের অনেক সময় খরচ হয় পরিবারের অন্যদের যত্ন এবং ঘরদোর সামলানোর জন্য। এসব কাজ পুরুষেরা করেই না। এতে তাদের কাজের বোঝা বাড়ে। জমির উপর তাদের অধিকার কমায়। আর তাদের নিজেদের শ্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়।

মার্চ - ২৪, ২৯-৫৮, মহিলা, চাষি, পরিবেশ

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ