জৈব জ্বালানি নীতি

অনেক প্রশ্নেরই উত্তর নেই সংশোধিত জৈব জ্বালানি নীতিতে


গত মে মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে জৈব জ্বালানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতির সংশোধন অনুমোদিত হয়েছে। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক ২০১৮ সালের ৪ জুন বায়ো ফুয়েল বা জৈব জ্বালানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতি প্রণয়ন করে। উল্লেখ্য ২০০৯ সালে প্রথমবার নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রক জৈব জ্বালানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতির তৈরি করে।

জৈব জ্বালানি ক্ষেত্রে বেশ কিছু অগ্রগতির কারণে ন্যাশনাল বায়োফুয়েল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এনবিসিসি) বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জৈব জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধি। এছাড়া স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মিশ্রিত পেট্রোলে ২০২৩ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে ইথানল মেশানোর মিশ্রণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত করতে হবে। এর জন্য জৈব জ্বালানি সংক্রান্ত জাতীয় নীতিতে সংশোধন করা হয়েছে।

জৈব জ্বালানির বিষয়ে জাতীয় নীতিতে যে সংশোধনগুলি অনুমোদিত হয়েছে, সেগুলি হ’ল -

১) এই জ্বালানির উৎপাদনে আরো বেশি জৈব পদার্থ মিশ্রিত করা হবে।
২) ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে পেট্রোলে ইথানল মেশানোর লক্ষ্যমাত্রা ২০ শতাংশ ধরা হয়েছে।
৩) মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচির আওতায় জৈব জ্বালানির উৎপাদনে উৎসাহদানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল/রপ্তানি-নির্ভর সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন সুযোগ দেওয়া হবে।
৪) এনবিসিসি-তে নতুন সদস্য নেওয়া হবে।
৫) নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে জৈব জ্বালানি রফতানিতে অনুমতি দেওয়া হবে।
৬) এনবিসিসি-র বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন নীতিতে বেশ কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের সংস্থান থাকছে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মনে করে, এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। ফলে মেক ইন ইন্ডিয়ার কর্মসূচির বাস্তবায়ন হবে। আরো কাজের সুযোগ তৈরি হবে। পেট্রোপণ্যের আমদানি-নির্ভরতা কমবে। আর জৈব জ্বালানি উৎপাদনে উৎসাহ বাড়বে। মন্ত্রিসভা মনে, এই জ্বালানির ব্যবহার বাড়লে ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত জ্বালানি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে।

এসবই খুব ভালো কথা। কিন্তু দেশে আরো বেশি ইথানল কীভাবে উৎপাদন হবে তার হদিশ কোথাও নেই। এদেশে মূলত আখ থেকে ইথানল তৈরি হয়। এছাড়া আলু, ভুট্টা, গম এবং অন্যান্য ফসলের স্টার্চ থেকেও ইথানল তৈরি হতে পারে। প্রশ্ন হল, চাষের জমির অভাবে এবং ভুল পরিকল্পনার জন্য কার্বোহাইড্রেড বা শর্করা জাতীয় খাদ্য আমাদের দেশে প্রচুর উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রোটিন, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন জাতীয় খাবারের অভাব রয়েছে। এসবই গাছ থেকে পাওয়া যায়। এবং এগুলি চাষের জন্য যে জমির দরকার তা নেই। তাহলে আখ থেকে ইথানল তৈরির জন্য জমি কোথায় পাওয়া যাবে? যদি নতুন জমি না পাওয়া যায়, তবে কি জমির জন্য আরো বন ধ্বংস করা হবে? এজন্য তো পরিবেশ আরো খারাপ হবে! অন্য একটি উপায় হল, এখন যে জমি আছে তাতে যে ফসল হয় তা বন্ধ করে ইথানলের জন্য আখ চাষ। এটা হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরো খারাপ হবে না তো? আখ চাষের জন্য প্রচুর জল লাগে। সেই জলই বা কোথা থেকে আসবে? এসবের উত্তর কিন্তু কোথাও নেই।

জুন - ২২, ২৭-৭১, পরিবেশ, সংরক্ষণ

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ