চালবাজ সরকার
দেশের খাদ্য বৈচিত্রের ব্যবহার হল অপুষ্টি এবং রক্তাল্পতার মতো সমস্যার সঠিক সমাধান
গতবছর স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপুর্তিতে লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন অপুষ্টি, মহিলা এবং শিশুদের বিকাশে সবথেকে বড় বাধা। তাদের পুষ্টির জন্য রেশনে, মিড ডে মিল-এ ২০২৪ সাল অবধি ফর্টিফায়েড চাল দেওয়া হবে।
অপুষ্টি দূর করতে ১৫টি রাজ্যের ১টি করে জেলায় পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ২০১৯-২০ সালেই এই চাল খাওয়ানোর প্রকল্প শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ খরচ ধরা হয়েছে ২৭০০ কোটি টাকা।
প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য, রক্তাল্পতা কমাতে লোহা বা আয়রন মেশানো চাল সরবরাহ করা। তবে ২০১৬-১৮ সালের পুষ্টি সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন, এই কৃত্রিম পদ্ধতিতে আয়রন মেশানো চাল অপুষ্টি কমাতে পারবে বলে মনে হয় না। তাঁরা বলেছিলেন, অপুষ্টি কমাতে ভিটামিন, প্রোটিন জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা করা দরকার। সে সবের তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রীয় সরকার, পাইলট প্রকল্পটি শুরু করে দিয়েছিল। সে সময় সরকারের বক্তব্য ছিল, তিন বছর বাদে সমীক্ষা করে ভালো ফলাফল পাওয়া গেলে, তবেই সব অপুষ্ট মানুষের জন্য প্রকল্পটি চালু করা হবে
সমীক্ষা কতটা এগোল তা জানতে গ্রিনপিস, ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএম আর)-এ তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন করেছিল। এই আবেদনে জানতে চাওয়া হয়েছিল, গর্ভবতী মহিলা, নতুন মা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, অপুষ্ট শিশু এবং মায়েদের ফর্টিফায়েড চাল খাওয়ানো এবং তার ফলাফল নিয়ে কোনো সমীক্ষা হয়েছে কিনা? আইসিএমআর জানিয়েছে, তারা এ নিয়ে কোনো সমীক্ষা করেনি। তবে তারা যেসব স্কুলে ৫-১২ বছরের বাচ্চাদের মিড ডে মিলে ফর্টিফায়েড চালের ভাত দেওয়া হত, তাদের সঙ্গে যে স্কুলের বাচ্চারা সাধারণ চাল খেয়েছে, তাদের মধ্যে তুলনামূলক সমীক্ষা করেছিল। সেই সমীক্ষায় তারা এই দুই ধরনের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পুষ্টির কোনো ফারাক দেখতে পায়নি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশনের প্রাক্তন উপ-অধিকর্তা ডঃ বীণা শত্রুঘ্নের মতে, কোনো একটি শস্য বা খাদ্য সব পুষ্টির উৎস হতে পারে না। আর সবার পুষ্টির জন্য একই ধরনের খাদ্য এবং অণুখাদ্যের প্রয়োজন, এই ধারণাও বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। এছাড়া চালে আয়রন যোগ করার ফলে শরীরে এই অণুখাদ্য বেশি প্রবেশ করতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
গ্রিনপিস ইন্ডিয়ার মতে, দেশের খাদ্য বৈচিত্রের ব্যবহার হল অপুষ্টি এবং রক্তাল্পতার মতো সমস্যার সঠিক সমাধান। এর জন্য শুধু চাল এবং গমের উপর নির্ভর না করে খাদ্য তালিকায় বাজরা, ডাল, মরশুমি ও স্থানীয় ফল, শাকসবজি এবং কন্দের ব্যবহার করার দরকার।
সূত্রঃ ডাউন টু আর্থ মে - ২২, ২৭- ৬৫, অপুষ্টি, মহিলা, শিশু
Comments
Post a Comment