সুন্দরবন ও দেশান্তর

পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনসহ ব-দ্বীপ এলাকার জনগোষ্ঠী কেন দেশান্তরিত হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক স্তরে এক সমীক্ষা চালানো হয়৷ যার নাম ব-দ্বীপ, জলবায়ু বদল এবং দেশান্তর। সমীক্ষা চালানো হয় তিনটি ব-দ্বীপ এলাকায়৷ গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা এই তিনটি নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে। একই সঙ্গে মহানদী এবং ঘানার ভোল্টা নদী অঞ্চলেও এই সমীক্ষা করা হয়৷

২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল অবধি করা এই সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা গেছে, জলবাযু পরিবর্তনের অভিঘাত সুন্দরবনে  ব-দ্বীপ অঞ্চলে সবথেকে বেশি। এখানকার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলি হলো, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলি, সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, ক্যানিং ও মথুরাপুর৷ এর সবগুলিই দক্ষিণ ২৪-পরগণার অন্তর্গত। এই এলাকার অধিবাসীরা মূলত কৃষিজীবী৷ অঞ্চলগুলিতে জলবায়ু বদলের ফলে ঘন ঘন বন্যায়, কৃষি জমি এবং মিষ্টি জলে উৎসগুলিতে  লবণের মাত্রা বাড়ায়, কৃষি উৎপাদন মার খাচ্ছে। ফলে সেখানকার অধিবাসীদের রুজি রোজগারে টান পড়ছে। আর তাই তারা জীবন ও জীবিকার তাগিদে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, মহিলাদের থেকে পুরুষরা সংখ্যায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি দেশান্তরী হচ্ছে ৷সমীক্ষায় বলা হয়েছে পুরুষরা দেশান্তরী হয় অর্থনৈতিক কারণে আর মহিলারা সামাজিক কারণে৷ 

পশ্চিমবঙ্গে এই সমীক্ষা চালানো হয় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাগুলির সুন্দরবন অধ্যুসিত ব্লকে৷ দেখা গেছে, ৬৪ শতাংশ লোকজন নিজের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দেয় অর্থনৈতিক অনটনে। ২৮ শতাংশ মানুষ যেতে বাধ্য হয় সামাজিক কারণে এবং ৭ শতাংশ যায় সামুদ্রিক ঝড়-তুফান এবং বন্যার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বেশির ভাগেরই গন্তব্য কলকাতা। তবে ১০ শতাংশ মহারাষ্ট্র, ৯ শতাংশ তামিলনাড়ুত, ৭ শতাংশ কেরালা এবং ৬ শতাংশ মানুষ গুজরাটে যায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশান্তরের পরিমাণ ৫৭ শতাংশ বাড়ে-কমে মরশুম অনুযায়ী৷ ডেকমা সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশান্তরী পুরুষ ও মহিলাদের গড়পড়তা বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে।

এপ্রিল ১৯২৪৮৩ জলবায়ু বদল, সুন্দরবন

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ