লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

২০১১ সালে, ৯৪৩-এর তুলনায় ২০৩৬-এ প্রতি হাজার পুরুষে, মহিলাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৫২

ভারত সরকারের রাশি-বিজ্ঞান এবং কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রক “ভারতের নারী ও পুরুষ ২০২৩”-এর ২৫তম সংখ্যা প্রকাশ করেছে। দেশের জনসংখ্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ে নারী ও পুরুষের ভূমিকা ও অবস্থান সম্পর্কে এই প্রকাশনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। লিঙ্গ-ভিত্তিক পরিসংখ্যানের পাশাপাশি গ্রাম ও শহর ভেদে এবং ভৌগোলিক অঞ্চল ভেদে প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি জায়গা পেয়েছে এখানে। সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রক / দপ্তর এবং সংগঠনের দেওয়া তথ্য।

“ভারতের নারী ও পুরুষ ২০২৩” শুধুমাত্র লিঙ্গসাম্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতিকেই তুলে ধরেনি, খামতির দিকগুলিকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই প্রতিবেদন ভারতের জনবিন্যাসগত পরিবর্তন বুঝতেও বিশেষভাবে সহায়ক হবে। এই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে মন্ত্রকের ওয়েবসাইট https://mospi.gov.in/-এ। প্রতিবেদনে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট হয়েছে তা হল, ২০৩৬ নাগাদ ভারতের জনসংখ্যা ১৫২.২ কোটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জনসংখ্যায় মহিলাদের অনুপাত হবে ৪৮.৮ শতাংশ – যা ২০১১-য় ছিল ৪৮.৫ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১১সালে ৯৪৩-এর তুলনায় ২০৩৬-এ প্রতি হাজার পুরুষে মহিলাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৫২।

১৫ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা ২০১১-র তুলনায় অনেকটাই কমে যাবে, জন্মহার কমার সুবাদে। অন্যদিকে, বাড়বে ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা। এটা লিঙ্গ অনুপাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সময়কালে ২০-২৪ এবং ২৫-২৯ বয়ঃসীমায় প্রসব হার যথাক্রমে ১৩৫.৪ থেকে ১৬৩.০ এবং ১১৩.৬ থেকে ১৩৯.৬ হয়েছে। ৩৫-৩৯ এবং তার চেয়ে বেশি বয়ঃসীমার ক্ষেত্রে এই হার ৩২.৭ থেকে বেড়ে ৩৫.৬-এ দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মহিলারা সন্তান ধারণের কথা ভাবছেন। কিশোরীদের প্রসব হারের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২০-তে নিরক্ষর গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই হার ৩৩.৯, সাক্ষরদের ক্ষেত্রে ১১.০।

যেসব মহিলারা সাক্ষর, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আসেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে নিরক্ষরদের তুলনায় প্রসব হার কম। সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি অনুযায়ী প্রসূতি মৃত্যুর হার ২০৩০-এ ৭০-এ নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। ভারত সরকারের আশা তারা সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে সফল হবে। শিশু মৃত্যুর হার পুত্র ও কন্যা - উভয় ক্ষেত্রেই কমের দিকে। কন্যাদের ক্ষেত্রে এই হার আগে সব সময়েই বেশি ছিল। কিন্তু ২০২০-তে তা নেমে এসেছে – ২৮-এ। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার ২০১৫-র ৪৩ থেকে ২০২০-তে ৩২-এ নেমে এসেছে।

১৫ বছরের ওপরে থাকা ছেলে ও মেয়ে উভয় ক্ষেত্রেই ২০১৭-১৮ পরবর্তী পর্বে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের প্রবণতা বাড়ছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে ২০১৭-১৮-য় এই হার ছিল ৭৫.৮, ২০২২-২৩-এ তা দাঁড়িয়েছে ৭৮.৫-এ। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে ২৩.৩ এবং ৩৭।

১৯৯৯-এর জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন মহিলা ভোটদাতাদের ৬০ শতাংশ – পুরুষদের তুলনায় ৮ শতাংশ কম। ২০১৪-য় এই ছবিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার দাঁড়ায় ৬৫.৬ শতাংশে। ২০১৯-এ তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭.২ শতাংশে। সেই প্রথম মহিলাদের ভোটদানের হার পুরুষদের ছাপিয়ে যায়।সরকার মনে করছে, নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য মহিলাদের ভোটদানে অংশগ্রহণ বাড়ছে। এছাড়া ২০২৩-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রসার দপ্তরের তালিকায় থাকা স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যা ১,১৭,২৫৪। এর মধ্যে ৫৫.৮১৬টি মহিলা পরিচালিত বলে বলা হয়েছে। 

সেপ্টেম্বর - ২৪, ৩০ - ১৮, লিঙ্গ সাম্য

Comments

Popular posts from this blog

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ