মিলেট চাষে বাধা

মিলেট চাষের সম্ভাবনা বাড়তে প্রচারসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ব্যবস্থা তৈরি করা দরকার

মিলেট শতাব্দী ধরে এদেশে চাষ এবং খাওয়া হয়েছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ এইসব ফসল চাষে কম জল লাগে। রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। উপরন্তু, তারা চরম তাপ এবং খরা সহ্য করতে পারে। তাই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষ করে খাদ্য স্বয়ম্ভরতা বাড়াতে মিলেটের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু দরকারি নীতি এবং ভালো উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও, এই চাষের প্রসারে বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়েছে।

গত কয়েক দশক ধরে দেখা গেছে, চাষিরা মিলেটের বদলে ধান বা গম চাষে উৎসাহী হয়েছে— বেশি লাভের আশায়। সবুজ বিপ্লব প্রযুক্তির বাড় বাড়ন্তের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। এর থেকে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হলেও ধান বা গম চাষে এখনও সরকার উৎসাহ দিচ্ছে।

হাইব্রিড বীজ, অতিরিক্ত জল, রাসায়নিক সার-বিষের কারণে ধান চাষ খুবই ব্যয়বহুল। তবুও এর জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি আছে। একটা বাজারও আছে। কিন্তু কয়েকটি রাজ্য ছাড়া মিলেট বিক্রির কোনো বাজার নেই।

ধানের তুলনায়, মিলেট চাষে শ্রম বেশি। খরচ কম। কিন্তু বাজার তৈরি হয়নি, তাই সারা মাঠের গুটিকয়েক চাষি এচাষে উৎসাহী হয়। ফলে বীজ বপন থেকে ফসল কাটা অবধি সব কাজ নিজেদেরই করতে হয়— যা ধান বা গম চাষে করতে হয় না। সেজন্যই মিলেট চাষে শ্রম কমানোর জন্য বিশেষ কৃষি সরঞ্জাম তৈরি প্রয়োজন। কিন্তু তা নিয়ে গবেষণা এবং পরীক্ষানিরীক্ষা বেশ কম।

মিলেটের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকরণ একটি বড় সমস্যা। জোয়ার, বাজরা, রাগি জাতীয় মিলেটের ক্ষেত্রে সমস্যা তুলনামূলক কম হলেও— কোদো, কুটকি, শ্যামা সহ ছোটো দানার মিলেটের প্রক্রিয়াকরণ বড় সমস্যা। এই কাজ যেহেতু মেয়েরাই করে, তাই তাদের পরিশ্রম বাড়ে।

বেশিরভাগ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলি বড় আকারের। এগুলি মূলত প্রধান ফসল ধান, গমের জন্যই ব্যবহৃত হয়। এসব কেন্দ্রে মিলেট জাতীয় ফসলের খোসা ছাড়ানো, ঝাড়াই-বাছাই করতে অনেক দিন সময় নেয়। তাই মিলেট চাষিরা সাধারণত এই পথ মাড়ায় না। কায়িক শ্রমের মাধ্যমেই ঝাড়াই বাছাই করা হয়। ফলে তাদের উপার্জনের সম্ভাবনাও কমে। এই সমস্যা কাটাতে ছোট প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র তৈরি এবং সেগুলি স্থানীয় স্বনির্ভর দল বা ফার্মার্স প্রড্যুসার কোম্পানিদের দিয়ে চালানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শুধু তাই নয়, মিলেট থেকে তৈরি নানারকম খাবারও এইসব কেন্দ্র থেকে তৈরি করা যেতে পারে। এই সব খাবার স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্র এবং আইসিডিএস, মিড ডে মিল ইত্যাদি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে একটি নতুন বাজারের সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।

মিলেট যারা চাষ করে তারা সাধারণত, মাটির পাত্রে কাপড় দিয়ে বেঁধে সংরক্ষণ করে। এতে ফসলে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর্দ্রতা বাড়লে ফসলে ছাতা পড়ে এবং তার থেকে মাইক্রোটক্সিন তৈরি হয়। বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় বিশ্বাস করে, বৃষ্টির পর কোদো বিষাক্ত হয়ে যায়। তবে এসব সংরক্ষণে কিছু স্থানীয় উপায়ও রয়েছে। মিলেটের এই ধরনের সমস্যাগুলি, বিকেন্দ্রীকৃত খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাজারের কথা বলে। মিলেট স্থানীয় এলাকা থেকে যদি দূরে বিক্রি করতে হয়, তবে তার সংরক্ষণ, প্যাকেজিং এবং পরিবহনের দিকে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।

এই বিষয়গুলি যদি ঠিক করা যায় এবং সরকার যদি মিলেট নিয়ে শুধু প্রচার না করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে, তবে সারা দেশেই মিলেট চাষের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

জুলাই - ২৪, ৩০ - ০২, মিলেট চাষ, খাদ্য নিরাপত্তা

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ