জীব বৈচিত্র মহাসম্মেলন

সুস্থ প্রকৃতি ছাড়া কোনো গতি নেই। তবুও আমরা প্রকৃতির ক্ষতি করেই চলেছি 


আবার একটি কনফারেন্স অব পার্টিস বা কপ অনুষ্টিত হল জীব বৈচিত্র নিয়ে। কানাডার মন্ট্রিওলে। এটা জীব বৈচিত্র নিয়ে ১৫ নম্বর কপ। মনে থাকবে হয়তো, গত মাসে জলবায়ু বদল নিয়ে ২৭ নম্বর কপ হয়ে গেল মিশরের শার্ম আল শেখ শহরে।

এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে পাশ হওয়ার কথা রয়েছে নতুন গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক। এই ফ্রেমওয়ার্কে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য একটি পথ নির্দেশ উপস্থাপন করা হবে। ২০১০ সালে কপ ১০-এ কিছু লক্ষমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল ২০২০ সালের মধ্যে দেশগুলি তা অর্জনের জন্য উদ্যোগ নেবে। কিন্তু, রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই লক্ষ্যমাত্রার একটিও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। উল্টে প্রকৃতি শোষণ বেড়েই চলেছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন ১০ লক্ষ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।

কপ ১৫ সম্মেলনে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেছেন, সুস্থ প্রকৃতি ছাড়া আমাদের কোনো গতি নেই। তবুও প্রকৃতির ক্ষতি করে এমন সব কাজ আমরা বাড়িয়েই চলেছি। বন উজাড় থেকে শুরু করে মরুকরণ, রাসায়নিক ও কীটনাশকের পরিবেশের ক্ষতি করেই যাচ্ছি। এতে ভূমির অবনতি হয়েছে। ফলে সবার মুখে খাবার তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। সাগরে ক্ষয়ের কারণে প্রবাল প্রাচীর ও অন্যান্য সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস ত্বরান্বিত হচ্ছে। এতে যারা সামুদ্রিক সম্পদের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের জীবিকার ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তিনি আরো বলেছেন, প্রকৃতি লুঠে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলির পকেট ভরছে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ প্রাকৃতিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, মুনাফা তৈরির বর্তমান গতি, প্রকৃতি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে। আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে, বেঁচে থাকার জন্য একটাই পৃথিবী রয়েছে। এই কনফারেন্স থাকে তাই প্রকৃতি রক্ষার একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে পেতেই হবে।

মহাসচিব প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন।

প্রথমত, প্রকৃতির ক্ষতি করে এমন কার্যকলাপের জন্য সরকারে ভরতুকি, করছাড় বন্ধ করতে হবে। পরিবর্তে, নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচার, প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস, প্রকৃতি-বান্ধব খাদ্য উত্পাদন এবং সম্পদের টেকসই ব্যবহারের দিকে নজন দিতে হবে। এই পরিকল্পনায় যারা প্রকৃতি সংরক্ষক যেমন আদিবাসী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বেসরকারি ক্ষেত্রকে প্রকৃতি শোষণ করে মুনাফা থেকে বিরত করতে হবে। এছাড়া খাদ্য ও কৃষি শিল্পকে অবশ্যই টেকসই উৎপাদন, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে জোর দিতে হবে। কাঠ, রাসায়নিক, নির্মাণ শিল্পগুলিকে প্রকৃতির উপর তাদের প্রভাবগুলি মূল্যায়ন করতে বাধ্য করতে হবে। জীব বৈচিত্র লুণ্ঠনকারী শিল্পের সুযোগ সুবিধার বন্ধ করতে হবে। সামগ্রিকভাবে এই ক্ষেত্রকে তার কাজের জন্য দায়বদ্ধ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

তৃতীয়ত, উন্নত দেশগুলি জন্য জীব বৈচিত্র সম্পন্ন দেশগুলির ক্ষতি হচ্ছে। তাই তাদের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।

গুতেরেস আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলিকে জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং তার টেকসই ব্যবহারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের নীতি-পদ্ধতি তৈরির আহ্বানও জানান।

ডিসেম্বর - ২২, ২৮-৩৩, জীব বৈচিত্র, কপ ১৫


Comments

Popular posts from this blog

রাজ্যে ভূ-জল কমছে

জিন ফসলঃ সরষের পর আবার বেগুন

ফসলে দাম নেই