জল বাঁচিয়ে ধান চাষ

হরিয়ানার চাষিরা ৭২ হাজার একর জমিতে সরাসরি ধান বুনে চাষ করে ৩১,৫০০ কোটি লিটার জল বাঁচিয়েছে


পাঞ্জাব, হরিয়ানাসহ সমগ্র উত্তর ভারত সবার আগে সবুজ বিপ্লবের চাষ শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর সাতের দশকে। কিন্তু তার পরের তিন দশকের মধ্যে চাষে থেকে নানা সংকট দেখা দেয়। চাষের জলের অভাব, রাসায়নিক বিষের দুষণ, চাষের খরচ বৃদ্ধি, জীব বৈচিত্রের সংকট ইত্যাদি। আর সেই কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বহুমুখী ফসল চাষের ওপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু তা সফল হয়নি। দেখা গেছে প্রতি বছরই ধান চাষের এলাকা বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩-এ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে, হরিয়ানায় ১৫.২ লক্ষ হেক্টর জমিতে এবং পাঞ্জাবে ৩২ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল, যা গত কয়েক বছরের থেকে বেশি।

হরিয়ানায়, 'মেরা পানি মেরা বিরসাত' স্কিম এবং ধান চাষের আওতাধীন এলাকা কমানোর লক্ষ্যে, গত পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন শস্য বৈচিত্র পরিকল্পনা সত্ত্বেও, ধানের আওতাধীন এলাকা ক্রমাগত বাড়ছে। এ থেকে বলা যায়, ফসল বহুমুখীকরণে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

এটি লক্ষণীয়, দেশের ধান উৎপাদনে প্রায় ১৫ শতাংশ, সরকারি সংগ্রহে ৩০ শতাংশ এবং বাসমতি চাল রফতানিতে ৮০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে হরিয়ানা-পাঞ্জাবের। এই কারণে ভূজল সংরক্ষণের পাশাপাশি ধান চাষের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে কৃষি ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫০ দিনের ধান চাষে মাত্র ৫০০-৭০০ মিলি সেচের জলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের যুগে, রোয়া ধান চাষে ১৫০০-২০০০ মিলি সেচের জলের দরকার। যা চাষের খরচ বাড়ায়, শক্তি এবং ভূজলের অপচয় করে।

আমাদের সংবিধানের ৫১এ (৭) অনুচ্ছেদ অনুসারে, বন, হ্রদ, নদী, ভূজল এবং বন্যজীবন সহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা এবং উন্নত করা প্রতিটি ব্যক্তি এবং সরকারের দায়িত্ব। সেজন্য ধান চাষে ভূজলের অপচয় রোধের জন্য কার্নালের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার রিসার্চ (আইসিআরআই)-এর আঞ্চলিক কেন্দ্র, সরাসরি ধান বপন করে চাষের প্রসার করছে ২০১৪-১৫ সাল থেকে। এইভাবে, আবহাওয়া উপযোগী ধান ২০ মে থেকে ১০ জুনের মধ্যে বুনে চাষ করলে, আগাছা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং ফলন রোয়া ধানের সমান হয়।

আইসিএআর এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনাকালে কৃষি মজুরের অভাবের সময়, ২০২১ সালে পাঞ্জাবের চাষিরা প্রায় ৬ লাখ হেক্টর, অর্থাৎ সে রাজ্যের মোট ধানের ২০ শতাংশ জমিতে সরাসরি বপন করে, সফলভাবে ধানের ফলিয়েছিল চাষিরা। সে বছর পাঞ্জাবে রেকর্ড ১ কোটি ২৮ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছিল।

একইভাবে, ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের খরিফে, হরিয়ানার চাষিরা ৭২ হাজার একরেরও বেশি জমিতে সরাসরি ধান বুনে ছিল। এইভাবে তারা ৩১,৫০০ কোটি লিটার জল বাঁচিয়ে ছিল। গত বছর এ রাজ্যের চাষিরা দুই লাখ একরেরও বেশি জমিতে সরাসরি বোনা ধানের চাষ করেছিল। এ বছর হরিয়ানায় ১০ লাখ একর জমিতে ধান বুনে চাষ করা হবে বলে, রাজ্য সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে।

জমিতে সরাসরি ধান বুনে চাষ করলে, রোয়া ধানের থেকে ৪০ শতাংশ জল কম লাগে। ফলে ভূজল বাঁচে। এই পদ্ধতিতে স্প্রিংক্লারের মাধ্যমে সেচ, বীজ ড্রিলের সাহায্যে ধান বপন করা হয়। বীজ বপনের পর প্রথম সেচ ১৫-২০ দিন পর এবং পরবর্তী সেচ বৃষ্টির উপর নির্ভর করে ৭-১০ দিনের ব্যবধানে দেওয়া হয়। সব জাতের ধান এভাবে চাষ করা যায় এবং রোয়া ধানের থেকে ১০-১৫ দিন সময় কম লাগে বলে, আইসিএআরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

এইভাবে চাষ করলে রোপণ পদ্ধতির তুলনায় ধান ১০-১৫ দিন আগে পাকে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ফসল তোলা হয়। ফসলের অবশেষ সহজে ব্যবহার করা যায়। ফলে বায়ু দূষণ হয় না। হাতে সময় থাকায় সবুজ সারের জন্য মুগের চাষ করা যায়। এতে পরের ফসলের জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব পদার্থ সঞ্চিত হয়।

বর্তমানে হরিয়ানা সরকার, বোনা ধান চাষের জন্য একর প্রতি ৫০০০ টাকা দেয়। আইসিএআর-এর বিজ্ঞানীদের মতে, হরিয়ানা সরকারের রোপণ করা ধান চাষে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। এতে ভূজল অপচয় কমবে। আর বিদ্যুৎ ও ডিজেলের ব্যবহারও অনেকটাই কমবে।

এপ্রিল - ২৪, ২৯-৬৭, ধান, জল 

Comments

  1. প্রতিটি খবরই গুরুত্বপূর্ণ । আমার পত্রিকা ২২ বছরের। মাঝে করনার জন্য ছেদ । তাই সংবাদ পরিষেবার সঙ্গেও কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় । আবার চালু হলো । আমরা যারপরনাই আনন্দিত।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ