আপনি কেমন মানুষ…

জলবায়ু বদল নিয়ে এর আগে ২৭টি কনফারেন্স হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে অনেক। তবে ‘কেউ কথা রাখেনি’। আগামীতেও রাখবে বলে মনে হয় না লিখছেন সুব্রত কুণ্ডু

আবার বুদ্ধিমান মানুষের কথা। দুবাইয়ে ২৮ নম্বর কনফারেন্স অব পার্টিস বা কপ শেষ হল। জলবায়ু বদল রুখতে বিশ্বের সব দেশের তাবড় মানুষদের মিটিং হল কপ। ৩০ নভেম্বর শুরু হয়ে, কপ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১২ ডিসেম্বর। কিন্তু এত বড় আয়োজনের মূল নোট তৈরি করতে লেগে গেল আরো একটি দিন। সম্মেলনের নোটে প্রথমে লেখা হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। পর্যায়ক্রম মানে, দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে কমাতে হবে এই জ্বালানির ব্যবহার।

এর অন্য একটি অর্থ হল, তাহলে আরো বেশি বেশি করে বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, কেউ তো আর চলতি বেচে খাওয়ার ‘উন্নয়ন’ মডেলের বিরোধিতা করছে না। তৃতীয় বিষয়টি হল, তুমি দুবাইতে বসে, কাঁড়ি কাঁড়ি পেট্রো ডলার খরচ করে মিটিং করছ। আর এই ডলারে যাদের ঘর সংসার চলছে তাদেরই বলছ, পর্যায়ক্রমে জ্বালানি কমাতে হবে! ভারত বা চিনের মত দেশ, যারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন কয়লা খনির খুঁজে ফিরছে, তাদের কয়লা তোলা বন্ধ করে দিতে হবে! এসব চলবে না। তাই নোটে লেখা হল ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসতে হবে’। কোনো সময়সীমা নেই, কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। সবাই খুশ।

আমরা যারা নির্বোধ, তাদের অবশ্যই মনে হয় এসব ফালতু কথা। কারণ এর আগে ২৭টি কপ হয়েছে। ‘কেউ কথা রাখেনি’। আগামীতেও রাখবে বলে মনে হয় না।

বুদ্ধিমান মানুষের আরো একটি গুণ হল যুদ্ধ করা। সারা পৃথিবী জুড়ে হয় ছোট বড় যুদ্ধ চলছে। না হলে যুদ্ধের মহড়া চলছে। ইসরায়েল-প্যালেস্তাইন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণই নেই। গাজায় যুদ্ধ বিরতির জন্য গত বছর ৮ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে সভায় যুদ্ধ বিরোধী প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো দিয়েছে মার্কিন দেশ। অর্থাৎ যুদ্ধ চলবে। মজার ব্যপার হল, এই পরিষদে বেশিরভাগ দেশ চাইলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আরো ৪টি স্থায়ী সদস্য দেশ ভিটো দিলে তা লাগু করা যায় না। তাই যুদ্ধ চলছে। এই দেশকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। অন্যদিকে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধও থামার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না পুতিন বা জেলেনস্কির পক্ষ থেকে।

যুদ্ধে জান-মালের তো ক্ষতি হয়। কিন্তু এতেও প্রকৃতি-পরিবেশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুনাফা বাড়ে যুদ্ধ ব্যবসায়ীদের। শক্তিশালী হয় বেচে খাওয়ার অর্থনীতি। আরো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ে। মজার ব্যাপার হল, কপ-এ যারা পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর পক্ষে ছিল, তাদের অনেকেই আবার যুদ্ধের পক্ষে। আসলে প্রায় সব দেশই যুদ্ধের পক্ষে। অন্য দেশের বিরুদ্ধে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে।

প্রকৃতির বিরুদ্ধে, জীবনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বুদ্ধিমান মানুষ। এখন আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি ‘বুদ্ধিমান’ বা ‘নির্বোধ’, কেমন মানুষ হবেন…

জানুয়ারি - ২৪, ২৯-৪৮, জলবায়ু বদল, নীতি 
 

Comments

Popular posts from this blog

রক্তচাপ কমায় টম্যাটো

সার থেকে ক্যান্সার

আচ্ছে দিন