অলাভজনক সংস্থাঃ কিছু তথ্য, কিছু প্রশ্ন

  • বাইজুসহ ৭০টি ভারতীয় স্টার্ট-আপ ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ১৭ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল— তার প্রভার অর্থনীতিতে কী ভয়ঙ্কর হচ্ছে, তা নিয়ে লেখায়, খবরে ভরে গিয়েছিল সংবাদ মাধ্যমগুলি।
  • কিন্তু ১০০টিরও বেশি অলাভজনক সংস্থা— যার গত সাত মাসের মধ্যে তাদের এফসিআরএ লাইসেন্স হারিয়েছে— তাদের নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই৷ এরকমই একটি সংস্থা কেয়ার, যারা ভারতে আইসিডিএস সেন্টারের ধারণা প্রসারের কাজ শুরু করেছিল যা পরবর্তিতে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বড় পরিবর্তন দেখা গেছিল। কিন্তু সেই সংস্থার লাইসেন্স বাতিলের ফলে প্রায় ৪ হাজার লোক কাজ হারিয়েছে।
  • দেশের জিডিপির ২ শতাংশ আসে অলাভজনক সংস্থাগুলির মাধ্যমে। এদের অধিকাংশ কর্মী ছোট শহর ও গ্রামে নিযুক্ত। সর্বোপরি, লক্ষ লক্ষ দুর্বল পরিবারের জন্য যারা কাজ করে।
  • পরিসংখ্যান ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন (MoSPI) মন্ত্রকের ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, এই ধরনের নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলিতে ২৭ লক্ষ লোক চাকরি করে। আর ৩৪ লক্ষ লোক পূর্ণ সময়ের স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া রয়েছে আংশিক সময়ের স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ। অলাভজনক সংস্থাগুলি সরকারের তুলনায় বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে।
  • ৫১৫টি অলাভজনক সংস্থাকে নিয়ে করা CSO Coalition@75 পরিচালিত এবং গাইডস্টার ইন্ডিয়ার একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে— ৪৭ শতাংশ সংস্থা যে অঞ্চলে কাজ করে, সেখানকার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় উৎস।
  • অলাভজনক সংস্থাগুলি রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সংযোগকারী। এদের ৫০ ভাগেরও বেশি সংস্থা স্থানীয়ভাবে, গ্রামীণ এলাকায় এবং জেলাগুলিতে কাজ করে। এদের কাজের ক্ষেত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, জীবিকা, জল ও পয়ঃব্যবস্থা বা স্যানিটেশন, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, নারী ও শিশু অধিকার, প্রতিবন্ধকতা জনিত সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে। এক কথায় বলতে গেলে এরা, নাগরিকের জীবনের প্রতিটি দিকের বিকাশের জন্য কাজ করে। তারা স্থানীয় জীবিকা তৈরি করে, দক্ষতা বিকাশ করে, সামাজিক গতিময়তার কথা প্রচার করে এবং স্থানীয় ব্যবসা তৈরি করে। অলাভজনক সংস্থাগুলির অর্ধেক সরকারি সংস্থা (স্কুল, পঞ্চায়েত, পৌরসভা, অঙ্গনওয়াড়ি এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র) এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সাথে কাজ করে৷ তাদের শক্তিশালী করে, আসলে স্থানীয় এলাকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
  • এই সব সংস্থায় কর্মরত লোকেদের কাজ সরকারি বা অন্যান্য চাকরি বা ব্যবসার মত নয়। প্রান্তিক ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নতির স্বার্থে, সামাজিক পরিবর্তনের জন্য এরা কাজ করে। তাই এদের কাজ বন্ধ হলে মানুষ এবং সমাজের উন্নয়নের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থায় পৌঁছয়।
  • এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিলের কারণে অনেক সংস্থা যারা নির্দিষ্ট এলাকায় কাজ করছিল, সেই সব এলাকার শিশু সুরক্ষা, টিকাদান, নবজাতকের মৃত্যু রোধ, স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়িগুলিতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ব্যবস্থা, প্রাথমিক শৈশব শিক্ষার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ, এবং তার জন্য সামগ্রী তৈরি করা, বাচ্চাদের স্কুলে অভিভাবকদের জড়িত করা, যুবকদের জন্য দক্ষতা এবং জীবিকার সুযোগ তৈরি, সরকারি প্রকল্প এবং পরিষেবাগুলি সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ওপরের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রতি আনুমানিক ৪ হাজার থেকে ৪ লক্ষ লাভার্থী এইসব পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সংস্থাগুলির এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল হওয়ার কারণে।
  • এছাড়া মানুষের সঙ্গে মানুষের, সমাজের, সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস তৈরির কাজ সংস্থাগুলি করত— তাও বন্ধ হয়ে গেছে।
  • গাইডস্টার ইন্ডিয়ার সমীক্ষা অনুসারে, সমীক্ষা করা অলাভজনক সংস্থাগুলির ৬৪ শতাংশ বলেছেন যে, তাদের কর্মচারীরা তাদের নিজ নিজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।
  • অনেক কর্মী যারা লাইসেন্স বাতিলের জন্য তাদের চাকরি হারিয়েছে, তারা সাধারণত স্নাতক বা কিছু ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ব্যক্তি। এরা গ্রামে, জেলায় যেখানে উন্নয়নের কাজ হয় সেখানকার বাসিন্দা এবং সংস্থাগুলির কাজের প্রধান শক্তি।
  • চাকরি থাকলে কর্মীর একটি পরিচয় থাকে, কথাবার্তার গুরুত্ব থাকে, স্বাধীনতা থাকে, নিজের অর্থ থাকলে নিজের উন্নতি, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা এসব কিছুর ব্যবস্থা করা যায়।
  • বেশিরভাগ গ্রামীণ সংগঠক যেখানে বাস করেন সেখানে সীমিত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। যদি শিল্প এবং অন্যান্য জীবিকার সুযোগের মতো উন্নয়নের ফল এই অঞ্চলে পৌঁছে যেত, তাহলে এই ব্যক্তিদের একাধিক কর্মসংস্থানের বিকল্প থাকত।
  • এত মানুষের কর্মসংস্থান এবং বিশাল সংখ্যক লাভার্থীদের সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা করে অলাভজনক সংস্থাগুলি সরকারেরই সুবিধা করে দেয়। তবুও শুরুর সময় থেকেই এই ক্ষেত্র অসংগঠিত।
  • এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, অন্য সব ক্ষেত্রর মত দুর্নীতি (দুর্নীতি বলতে অর্থসহ সব ক্ষেত্রের নীতিহীনতার কথা বলা হচ্ছে) এই ক্ষেত্রেও রয়েছে। কিন্তু সরকারের তো দুর্নীতি দমনের অনেক ব্যবস্থাও রয়েছে। সেই ব্যবস্থা ব্যবহার করে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু ছোট খাট ভুল ভ্রান্তি এবং দুর্নীতির সাজা এক হয়ে গেলে অবিবেচকের মত কাজ হয়ে যায় না কি! নাকি এই ক্ষেত্র সরকারের ভুল ভ্রান্তি ধরিয়ে দিচ্ছে বলে অন্য সমালোচক ক্ষেত্রগুলির মত, এদেরও মুখ বন্ধ করতে সরকার এমন সব কাজ করছে।

সুত্রঃ ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট, 
MoSPI Government on India রিপোর্ট 

সেপ্টেম্বর - ২৩, ২৯-২৪, উন্নয়ন, এনজিও

Comments

  1. এইসব সংস্থার কর্মীদের কিন্তু তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। চরম একনায়কতন্ত্র কায়েম করে কর্তৃপক্ষ যা চায় সেটাই হয়। যেসব সংস্থা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের কর্মীদের অবস্থা নিয়েও সমীক্ষা প্রয়োজন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ