প্রাকৃতিক চাষে এগিয়ে চলেছে অন্ধ্রপ্রদেশ

২০১৬ সাল থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে কমিউনিটি ম্যানেজড ন্যাচারাল ফার্মিং কর্মসূচির অধীনে ১০০ শতাংশ রাসায়নিকমুক্ত চাষের কাজ চলছে


২০১৬ সাল থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে কমিউনিটি ম্যানেজড ন্যাচারাল ফার্মিং (APCNF) কর্মসূচির অধীনে ১০০ শতাংশ রাসায়নিকমুক্ত চাষের কাজ চলছে। এই রাজ্যে প্রায় ৬০ লক্ষ চাষি রয়েছে, এর মধ্যে ৬লক্ষ ৩০ হাজার চাষি এই কাজে যুক্ত হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিং, ইউনাইটেড কিংডম এবং রাইথু সাদিকারা সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রচলিত চাষের তুলনায় এই পদ্ধতিতে চাষের উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতায় কোনো তারতম্য ঘটেনি। কিছু ক্ষেত্রে উৎপাদন বেড়েছে।

প্রচলিত চাষে প্রচুর রাসায়নিক কীটনাশক এবং সার ব্যবহার হয়। এর ক্ষতিকর এবং অর্থনৈতিক প্রভাবে, বহু চাষি এই রাজ্যে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল। বলা যায়, চাষিদের আত্মহত্যায় বরাবর প্রথম সারিতে থাকত এই রাজ্য। এর বিকল্প হিসেবে যে জৈব চাষের প্রসার কথা বলা হয় তাতেও জৈব উপকরণের জন্য বাজারের ওপরই নির্ভর ছিল চাষিরা। ফলে তাদের খরচের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছিল। এরই ফলস্বরূপ জিরো বাজেট ন্যাচরাল ফার্মিং (বা শূন্য খরেচের প্রাকৃতিক চাষ)-এর আদলে কমিউনিটি ম্যানেজড ন্যাচারাল ফার্মিং শুরু করা হয়।

উল্লেখ্য, এই পদ্ধতির চাষে কোনো কৃত্রিম কীটনাশক বা সার ব্যবহার করা হয় না। বাজার থেকে কোনো জৈব সার কেনাও হয় না। চাষিদের হাতের কাছে থাকা গোবর, গোমূত্র, গাছপালা, পাতা থেকে চাষিরা নিজেরাই সার, কীটরোধক তৈরি করে ব্যবহার করে। ফলে শ্রম বেশি লাগলেও চাষের উপকরণের জন্য টাকা পয়সার খরচ করতে হয় না। অ্যাগ্রোনমি ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত এই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চাষে ফসলের উৎপাদন কমে না। অন্যদিকে ফসলের পুষ্টিগুণও অক্ষত থাকে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাসায়নিক চাষে উৎপাদিত ফসলের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে না।

গবেষকরা ২০১৯-২০ সালের জুন মাস থেকে তিনটি মরশুমে ২৮টি খামারে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। খামারগুলি রাজ্যের অনন্তপুর, কাদাপ্পা, কৃষ্ণা, নেলোর, প্রকাশম এবং বিশাখাপত্তনম জেলা জুড়ে বিভিন্ন কৃষি-জলবায়ু অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, যদি এই রাজ্যের মোট উৎপাদিত ফসলের ২৫ শতাংশ ফসল, শূন্য খরচের প্রাকৃতিক চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়, তবে প্রতি বছর রাসায়নিক সারে ভরতুকি না দেওয়ার জন্য সরকারের ৫৭৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

রাসায়নিক সারের ব্যবহারে চাষিদের অর্থের অপচয় হয়, স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। এছাড়া গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, জীববৈচিত্রের ক্ষতি এবং পরিবেশ দূষণ তো হয়ই। কিন্তু প্রাকৃতিক চাষে এইসব ঝুঁকি একেবারেই কমিয়ে ফেলা যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এপ্রিল - ২৩, ২৮-৫৬, প্রাকৃতিক কৃষি, অন্ধ্রপ্রদেশ

Comments

Popular posts from this blog

রক্তচাপ কমায় টম্যাটো

সার থেকে ক্যান্সার

আচ্ছে দিন