ভারতের অ-সার ব্যবস্থা
চাষের জমিতে মূলখাদ্য, অণুখাদ্য এবং জৈব কার্বনের অভাব রয়েছে। রাসায়নিক সারের ব্যাপক ব্যবহার মাটির এই প্রাকৃতিক পুষ্টির হ্রাসের প্রাথমিক কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিএসই'র রিপোর্টে
দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই) ভারতে জৈব সার নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ২০১৫-১৬ এবং ২০১৮-১৯-এই সময়ের মধ্যে সারা ভারতে পরীক্ষিত মাটির তথ্যের সমীক্ষা করে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে সংস্থাটি।
রিপোর্টিতে বলা হয়েছে, ভারতের মাটিতে মূলখাদ্য, অণুখাদ্য এবং জৈব কার্বনের অভাব রয়েছে। রাসায়নিক সারের ব্যাপক ব্যবহার মাটির এই প্রাকৃতিক পুষ্টির হ্রাসের প্রাথমিক কারণ। ২০১৯ সালে ভারত, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাসায়নিক সারের উত্পাদক এবং ব্যবহারকারী ছিল, যেখানে মোট ব্যবহৃত রাসায়নিক সারের প্রায় ৫০ শতাংশই ইউরিয়া। এই প্রেক্ষাপটে রিপোর্টটিতে জৈবসার ব্যবহারের উপকারিতাও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
- প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জৈবসারকে উপকারী অণুজীবের ব্যবহারের উপযোগী করে বীজ, শিকড় বা মাটিতে যোগ করলে, মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়।
- জৈব সার হল উদ্ভিদ, প্রাণীর অংশ এবং বর্জ্য থেকে প্রাপ্ত পচনশীল জৈব উপাদান দিয়ে তৈরি পদার্থ। জৈব সারের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সার, ভার্মিকম্পোস্ট এবং শহরের আবর্জনা থেকে তৈরি কম্পোস্ট।
- দেশ জুড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি মাটির নমুনার উপর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতের মাটিতে নাইট্রোজেন, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো জৈব কার্বন এবং অণুখাদ্যের অনেক অভাব রয়েছে। তাদের পরীক্ষিত সমস্ত মাটির নমুনার মধ্যে ৯৭ শতাংশে নাইট্রোজেনের ঘাটতি ছিল, ৮৫শতাংশে জৈব কার্বনের ঘাটতি ছিল, ৮৩ শতাংশে ফসফরাস এবং ৭১ শতাংশে পটাশিয়ামের ঘাটতি ছিল।
- ২০২০-২১ সালে ভারতের মোট রাসায়নিক সারের (সিঙ্গল সুপার ফসফেট বাদে) ব্যবহার হয়েছিল ৬২৯.৮ লক্ষ টন। আর প্রতি হেক্টর সার ব্যবহার হয়েছিল ১৬১ কিলোগ্রাম। যা ২০০০-০১ সালের সার ব্যবহারের থেকে মোট খরচের ৮২.৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া ওই বছরের তুলনায় হেক্টর প্রতি ৭৫ শতাংশ বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়েছে ২০২০-২১ বছরে।
- রিপোর্ট অনুসারে, হেক্টর প্রতি থথেকে বেশি সার ব্যবহার করেছে, বিহার, পুদুচেরি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, দিল্লি এবং উত্তরাখণ্ড৷
- রিপোর্টটিতে রাসায়নিক সারের ওপর ক্রমবর্ধমান ভরতুকি উল্লেখ করা হয়েছে।২০২০-২১ বছরে রাসায়নিক সারের জন্য ভরতুকি দেওয়া হয়েছিল ১,৩১,২৩০ কোটি টাকা, ২০০০-০১ সালে যার পরিমাণ ছিল ১২,৯০৮ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০ বছরে এর পরিমাণ ছিল ৮৩,৪৬৮ কোটি টাকা।
- গবেষণায় দেখা গেছে, রাসায়নিক সার সময়ের সাথে ফসলের উপর কম কার্যকরী হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সার প্রয়োগের সাথে সারের প্রতিক্রিয়ার অনুপাত (প্রতি কেজি সার প্রয়োগে উৎপাদিত শস্য পরিমাণ কেজিতে) ১৯৭০ সালে ১৩.৪ থেকে ২০১৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২.৭-এ।
- কোনো একটি বাহকের মাধ্যমে যে জৈব সার উৎপাদিত হয়, ২০২০-২১ বছরে সেই জৈবসার উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১,৩৪,৩২৩ টন, যা ২০১৮-১৯ বছরের তুলনায় ৮৩ শতাংশ বেড়েছিল। অন্যদিকে, ভারতে ২০২০-২১ বছরে তরল জৈবসারের উৎপাদন হয়েছিল ২৬,৪৪২ কিলোলিটার।
- রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার দেশে জৈবসারের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য দুই ধরনের কর্মসূচি চালায়। এক্ষেত্রে চাষিদের লক্ষ্যে রেখে পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা, ভারতীয় প্রকৃতিক কৃষি পদ্ধতি এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশন চালানো হয়। দ্বিতীয় ধরনের কর্মসূচির লক্ষ্য, উৎপাদক এবং বিপণনকারীদরা। যার জন্য মূলধন বিনিয়োগ, ভরতুকি প্রকল্প, জাতীয় বায়োগ্যাস এবং জৈব সার কর্মসূচির মতো প্রকল্প চালানো হয়। রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় উভয় ধরনের প্রকল্পে খুব কমই বিনিয়োগ করে সরকার। তাই প্রকল্পগুলি খুব একটা সফল হয়নি।
- দেশে জৈবসার তৈরি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু প্রধান বাধা হল সরকারি তহবিল এবং ভরতুকি না থাকা। এছাড়া জৈবসারের গুণমান নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণার ক্ষেত্রে অনীহা, এর প্রসারে বাধার অন্যতম কারণ।
- জৈবসারের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর জন্য রিপোর্টটিতে একটি মোটা অঙ্কের তহবিলসহ জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া এই সার নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, গুণমান নিয়ন্ত্রণ, একে সহজলভ্য করার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকেগুলির সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
অক্টোবর - ২২, ২৮-২০, জৈব সার, কৃষি ব্যবসা
Comments
Post a Comment