জৈব চাষে লঙ্কাকাণ্ড

শ্রীলঙ্কায় খাদ্যের অভাবের কারণ হল জৈবচাষ। এরকমই এক নিবন্ধ লিখেছেন এক অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক । সত্যিই কি জৈব চাষের জন্য এমন হাঁড়ির হাল - খুঁজেছেন সুব্রত কুণ্ডু 


শ্রীলঙ্কায় খাদ্যের অভাবের কারণ হল জৈব চাষ। এরকমই এক নিবন্ধ লিখেছেন অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক স্বামীনাথান আঙ্কেলেশ্বর আইয়ার। ওই নিবন্ধে তিনি পরোক্ষে চাষে রাসায়নিক ব্যবহার এবং জিন বদলানো ফসল চাষের পক্ষে যুক্তি সাজিয়েছেন। যার যা কাজ।

শ্রীলঙ্কায় সরকার ১০০ শতাংশ জমিতে জৈব চাষ প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছিল ২০১৯ সালে। লক্ষ্য ছিল মানুষের নিরাপদ খাদ্যের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য, এক স্বাস্থ্যকর এবং উৎপাদনক্ষম কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ২০২১ সালের ৬ মে তারা রাসায়নিক সার এবং বিষের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এসবের অনেক আগে থেকেই কিন্তু শ্রীলঙ্কায় ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে জৈব চাষ শুরু হয়ে ছিল।

শ্রীলঙ্কায় মোট জমির ৪১.৬৩ শতাংশ জমিতে চাষ হয়। এর মাত্র ২৩.৪৫ শতাংশ জমিতে খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য ফসল চাষ হয়। সরকারি হিসেব বলছে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল অবধি লাগাতার খাদ্য ফসলের চাষ থেকে আয় কমেছে। অন্যদিকে এদেশের ১০.৩২ শতাংশ জমিতে অর্থকরী ফসল হিসেবে চা, রাবার, নারকেল, পাম তেল, কাজু, আখ ইত্যাদির একক চাষ হয়। এইসব ফসলের বেশিরভাগটাই রফতানি হয়। এখনো অবধি যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে, এর আগের তুলনায় ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালে এই সব ফসলের রফতানি কমেনি। একটু হলেও বেড়েছে। তবে করোনাকালে আন্তর্জাতিক বাজারের টালমাটাল অবস্থা দামের কিছুটা হেরফের হওয়ার আয় কমেছে।

এটা ঠিক যে ২০২০ এবং ২০২১ সালে খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য ফসলের উৎপাদন কমেছে। এজন্য জৈব চাষ নয়, রাজনৈতিক গিমিক দায়ী। গবেষণা, পরিকল্পনা এবং প্রসার কর্মসূচির ক্ষেত্রে সুচিন্তিত পদক্ষেপ না নিয়ে, দ্রুততার সঙ্গে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া দায়ী। গাছে না উঠেই এক কাঁদি চাইলে যা হয়। যে দেশের ৬৪ শতাংশ চাষি নিরাপদ চাষের জন্য রাজি ছিল, সেখানে সরকার একটু সংবেদনশীল হলে, ধাপে ধাপে এগোলে এই বদনামের ভাগী হতে হত না।

নানা কারণে এখন শ্রীলঙ্কায় চূড়ান্ত আর্থিক মন্দা। খাদ্যের অভাব। আগেও এই দেশ খাদ্যে সয়ম্ভর ছিল না। আমদানি করতে হত। তখন হাতে টাকা ছিল। কথা ওঠেনি। এখন নেই তাই যত দোষ জৈব চাষের।

১২ হাজার বছর বা গোটা হলোসিন যুগ ধরে, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পারম্পরিক প্রথায় চাষের বিস্তার ঘটেছে এই ধরায়। যা ছিল নিরাপদ। এসময় চাষের উন্নতিও হয়েছে। এমনকি গত ২৫০ বছরের শিল্প সমাজ – যেখানে মানুষ নিজেকে মুখ্য ভাবতে শুরু করলো – সেই অ্যান্থ্রপোসিন যুগের বেশিরভাগ সময় জুড়ে চলেছে পারম্পরিক নিরাপদ চাষ। আর যেখানে জল, জমি, অন্যান্য সম্পদকে শোষণ করার সুযোগ নেই সেখানে, বিক্ষিপ্ত হলেও, এখনো টিকে আছে নিরাপদ চাষ।

কিন্তু যেখানে লাভ এবং লোভের জন্য প্রকৃতিকে শোষণ করা গেছে। গত ৭০-৮০ বছরে সেখানে বেড়েছে ‘উৎপাদন’। কিসের? ধান, গম ইত্যাদি গুটিকয়েক ফসলের। এখন প্রশ্ন, ধান খেতের ধান ছাড়া মাছ, চিংড়ি, শাকপাতা, আতাড়িপাতাড়ি, উৎপাদনের হিসেব করা হয়েছে? জল, জমি বায়ু, প্রকৃতি দূষণের হিসেব কষা হয়েছে? করা হয়েছে চাষ থেকে রোগ ও তার খরচের হিসেব? উৎপাদন বাড়া-কমার আসল প্রশ্ন এখানেই লুকিয়ে আছে।

এপ্রিল- ২২, ২৭- ৬০ কৃষি, অর্থনীতি, শ্রীলংকা

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ