ভঙ্গুর উন্নয়নের কারণ

এখনকার কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাস্তু, পরিবশে, প্রকৃতি
সর্বোপরি উন্নয়ন প্রক্রিয়া ততটা টেকসই নয়। একথা রাষ্ট্রসংঘও মানে, লিখছেন সুব্রত কুণ্ডু




সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট, সাসটেনেবল এগ্রিকালচার জাতীয় কিছু শব্দবন্ধ এখন বেশ পরিচিত। আর তাই পরিচিত হয়েছে সাসটেনেবল শব্দটিও। প্রকৃতি, পরিবেশ, উন্নয়ন বিষয়ক কথাবার্তায় সাধারণত এটি ব্যবহার হয়। কথাটির বাংলা কি তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে, আমার মনে হয়, খুব কাছাকাছি হল টেকসই। অনেকে সুস্থায়ী শব্দটিও ব্যবহার করে।

কিন্তু কেন এই কথাটি নিয়ে এত ‘কথা’ ! কারণ এখনকার কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাস্তু, পরিবশে, প্রকৃতি সর্বোপরি উন্নয়ন প্রক্রিয়া ততটা টেকসই নয়, তাই। একথা রাষ্ট্রসংঘও মানে। আর সেজন্যই তারা ২০১৫ সালে ১৭ দফা সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট গোল বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য স্থির করে। ১৯৩টি দেশ এই লক্ষ্যের কাগজে সইও করে। অঙ্গীকার করে ২০৩০-এর মধ্যে তা অর্জন করার জন্য।

এর আগে মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল ২০১৫ সনের মধ্যে অর্জন করার লক্ষ্য স্থির হয়েছিল। সেখানেও সাসটেনেবল বা টেকসই কথাটি বারবার ব্যবহার হত। সেই লক্ষ্যের বেশিরভাগই অর্জন হয়নি। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য।

ইংরাজিতে সাসটেনেবল কথাটির বিপরীত শব্দ হল আনসাসটেনেবল। কিন্তু বাংলায় কি হবে, অস্থায়ী? হতে পারে। ভঙ্গুরও হতে পারে। তবে যাই বলি না কেন, বর্তমানের ভোগ এবং লোভের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় -- প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ, জলবায়ু ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। সব ধরনের বিপর্যয় বাড়ছে।

এই ভঙ্গুরতার মুল চারটি কারণ রয়েছে বলে আমার মনে হয়। আর এই চারটি কারণই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি হল –

আমরা মাটির গভীর থেকে প্রচুর জ্বালানি, প্রাকৃতিক গ্যাস, নানারকম খনিজ পদার্থ, ভারি ধাতু তুলে নিচ্ছি। আর সেগুলি জড়ো করছি পৃথিবীর ওপরে। এই ‘তোলা’র হার এত বেশি যে প্রকৃতি তা মানিয়ে নিতে পারছে না।

দ্বিতীয়ত, আমরা এমন সব রাসায়নিক পদার্থ বা সামগ্রী তৈরি করছি, যেগুলি স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতিতে জন্মায় না। যেমন প্লাস্টিক, থার্মোকল ইত্যাদি। এগুলি ভাঙতে এবং প্রকৃতিতে মিশে যেতে, অনেক অনেক বছর সময় লাগে। এছাড়া প্রকৃতিতে থাকা কিছু রাসায়নিক, যেমন কার্বন ও নাইট্রোজেন যৌগ, আমরা তৈরি করছি। কিন্তু এই যৌগগুলি এত বেশি পরিমাণে তৈরি করছি যা প্রকৃতি ধারণ, গ্রহণ বা শোষণ করতে পারছে না। ফলে তা প্রচুর পরিমাণে প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে জীবকূলের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়ছে।

প্রকৃতিতে নানারকম চক্র চলে। সেই চক্রগুলি মানুষের এই কাজে বাধা পাচ্ছে। অন্যদিকে শহর, রাস্তাঘাট, শিল্প ও তার কাঁচামাল সরবরাহের জন্য আমরা বন কেটে নিঃশেষ করে ফেলছি। বনের মধ্যে এবং বনকে নিয়ে নানা প্রাকৃতিক চক্র চলে। সেই চক্রগুলি ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই জলবায়ু বদল খুব দ্রুত হচ্ছে। একইভাবে জলের উৎস, জমিসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদগুলিই আমরা নষ্ট করে ফেলছি লোভের জন্য। এটি তৃতীয় কারণ।

এই তিনটি প্রাকৃতিক কারণের সঙ্গে রয়েছে একটি সামাজিক কারণ। লোভের সংস্কৃতি, সমাজে এক অভূতপূর্ব বৈষম্য তৈরি করেছে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা বেড়াতে চাঁদে যাচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই। নেই শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা। তাদের যোগ্যতা, সৃজনশীলতার কোনো গুরুত্ব নেই। যেমন কৃষি সংস্কৃতির প্রধান রূপকার চাষিদের হাত থেকেই চাষ চলে গেছে কর্পোরেটের দখলে। ফুলে ফেঁপে উঠছে কর্পোরেট। মালিক চাষি চাষ ছেড়ে মজুরে পরিণত হয়েছে। কোনোরকম সুযোগ সুবিধা ছাড়া, এদের বেঁচেবর্তে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

আগে যেমন বলেছি, অস্থায়ী বা ভঙ্গুর উন্নয়ন ব্যবস্থার কারণ এই চারটি। আমার মতে। আপনার মত কী বলে? আসুন আলোচনা শুরু করা যাক। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে।

ডিসেম্বর -২১, ২৭- ৩৯, উন্নয়ন, পরিবেশ, বৈষম্য

Comments

Popular posts from this blog

রাজ্যে ভূ-জল কমছে

জিন ফসলঃ সরষের পর আবার বেগুন

ফসলে দাম নেই