কৃষিঃ চাষির লেখাজোখা
ভারতে একজন চাষির গড় জমি রয়েছে ১.০৮ হেক্টর। এই জমির ফসল আট জনের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে সাহায্য করে।
·
এদেশের ছোট ও প্রান্তিক চাষি, মোট চাষির ৮৩ শতাংশ। আর তারা
চাষ করে মাত্র ৪২ শতাংশ জমি।
·
চাষির বড় দুটি দায় রয়েছে। তারা নিজেদের পরিবারকে বেঁচে থাকতে
সাহায্য করে আর দেশের মানুষ, পশু পাখির খাবার জোগায়।
·
ভারতে খাদ্যের নিরাপত্তা তৈরি হয়েছে চাষিদেরই পরিশ্রমে। গত
পাঁচ বছর ধরে বাম্পার ফসল ফলাচ্ছে এদেশের চাষিরা।
·
মহামারিতে যখন অন্যান্য ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার তলানিতে এসে ঠেকেছে,
তখন দেশে ফসল উৎপাদনে রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে চাষিদেরই হাত ধরে।
·
দেশের অগণিত চাষি ২০.১৩
লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতি তৈরি করেছেন। অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় এখনো কৃষিকাজ
করে।
বঞ্চিত চাষিঃ গত কয়েক বছর ধরে
চাষিরা রাস্তায়। আপনি হয়তো কখনো ‘জয় জওয়ান জয় কিষান’ স্লোগান দিয়েছেন। কিন্তু কখনো
ভেবেছেন কেন চাষিরা রাস্তায়? চাষিরা ২০২০ সালে ২২টি রাজ্যে ৭১ বার রাস্তায় নেমেছে,
কখনো ফসলের দাম না পাওয়ার জন্য, অথবা চাষে নানারকম দমন নীতির জন্য।
জাতীয় গড় উৎপাদনে চাষিদের অংশ ক্রমশ কমছে। সেজন্য নীতিকারদের কাছে তারা
ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। নেতাদের ধারণাও একই। কিন্তু চাষের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের
সংখ্যা এখনো বাড়ছে। পাঁচের দশকে জাতীয় গড় উৎপাদনে চাষিদের অংশ ছিল ৫১ শতাংশ। এখন তা
কমে হয়েছে ১৬ শতাংশ। অপরদিকে ১৯৫১ সালে ৭ কোটি চাষি পরিবার এবং ২.২ কোটি খেতমজুর চাষের
কাজে যুক্ত ছিল। আর এখন চাষ করছে ১২ কোটি চাষি পরিবার এবং ১৪.৪ কোটি খেতমজুর।
ঋণে জর্জর চাষিঃ
পরিসংখ্যান
বলছে ভারত বিশ্বের দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতি। এ নিয়ে আমরা যথেষ্ট উৎসাহিত। কিন্তু এই
বিকাশের ছিটেফোঁটা চাষিদের কপালে জুটেছে। কারণ দেশে দুজন চাষি মধ্যে একজন ঋণগ্রস্ত।
এদেশে একজন চাষির মাসিক আয় ৬৪২৬ টাকা আর ব্যয় ৬২২৩ টাকা। দেশের মাত্র ১৫ ভাগ চাষি,
কৃষি থেকে মোট আয়ের ৯১ শতাংশ পায়। এরা মূলত বড় চাষি। ফলে চাষিদের মধ্যেই রয়েছে আয়ের
বিরাট বৈষম্য। বৈষম্য রয়েছে অন্য পেশার লোকেদের সঙ্গেও।
বেশিরভাগ চাষিদের হাতে বাজার থেকে জিনিসপত্র কেনার জন্য বিশেষ কিছু পড়ে
থাকে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা যা কেনে তা দেশের জাতীয় গড় উৎপাদনের একটি বৃহৎ অংশ।
কারণ দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ পরিবার কৃষি এবং তার আনুষঙ্গিক কাজে যুক্ত। এর অর্থ হল,
দ্রুত বিকাশশীল দেশের অর্থনীতির ধ্বজা চাষিরাই এগিয়ে নিয়ে চলেছে। কিন্তু এই বিকাশ কি
সুস্থায়ী হবে ? উত্তর হল না। কারণ চাষিদের আর্থিক অবস্থা যত খারাপ হবে, অর্থনীতিও তত
ভঙ্গুর হয়ে যাবে।
জলবায়ু বদলের মারঃ
দেশে
২০১৯ সালে, কৃষিকাজে যুক্ত প্রায় দু'জন লোক প্রতি ঘণ্টায় আত্মহত্যা করেছেন। ভারতে
মোট আত্মহত্যার ঘটনার মধ্যে ৪.৮ শতাংশ ঘটেছে চাষিদের মধ্যে থেকে। জলবায়ু বদল চাষিদের
ওপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলছে। সরকারি তথ্য বলছে, এর ফলে চাষিদের আয় ২৫ শতাংশ অবধি কমতে
পারে। জলবায়ু বদলের কারণে দেশের ১০০টি দরিদ্রতম জেলা খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে।
এই জেলাগুলি চাষের ওপরই নির্ভরশীল। এজন্য প্রতি বছর ৭০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
খরা, কৃষিকাজে বিশেষত বৃষ্টি নির্ভর চাষে প্রবল ক্ষতি করছে। ২০০৯ থেকে ২০১৯
অবধি খরা প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। এদেশে ৫০ শতাংশেরও বেশি
চাষি বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে চাষ করে। জলবায়ু বদলের ফলে খরা ও বন্যা প্রতি বছর
৩০ কোটি চাষির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
চাষির আয় কমছেঃ ২০১১ সালের জনগণনা
অনুসারে প্রতিদিন ২ হাজার চাষি কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে। পরিবারের মোট আয়ের মধ্যে, কৃষিকাজ
থেকে আয় হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৭০ সালে গ্রামীণ পরিবারের চার ভাগের তিন ভাগ আয়ের উৎস ছিল
কৃষিক্ষেত্র। ২০১৫ সালে, প্রায় ৪৫ বছর পর, তা তিন ভাগের এক ভাগেরও কম হয়েছে। বেশিরভাগ
পরিবার এখন অকৃষি কাজ থেকে বেশি আয় করছে। বর্তমানে একজন দিন মজুরও চাষির থেকে বেশি
আয় করে।
সূত্রঃ ডাউন টু আর্থ
ফেব্রুয়ারি - ২১ ২৬-১০, কৃষক, কৃষি
Comments
Post a Comment