সুস্থায়ী চাষের বাজেট

প্রচুর বাইরের সামগ্রী যেমন রাসায়নিক সার, বিষ, বীজ নির্ভর চাষের এখনও রমরমা। এতে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন জল, মাটি, জৈব বৈচিত্রের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। তেমনি জলবায়ু বদলের অন্যতম কারণ এই চাষ। তবুও সরকার এখনো এই চাষেরই প্রসার করছে। অন্যদিকে ক্ষুধা নিবৃতি, দারিদ্র মোচন, সুস্থায়ী পরিবেশসহ ২০৩০ সালের মধ্যে সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্যও কাজ করার অঙ্গীকার করেছে আমাদের সরকার। সরকার যদি সত্যিই সুস্থায়ী উন্নয়ন চায়, তবে দ্রুত সবুজ বিপ্লবের নেশা ছেড়ে আরো দায়বদ্ধ, পরিবেশমুখী সুস্থায়ী কৃষিনীতি গ্রহণ করতে হবে। কথাগুলি এই চাষের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনেরা বরাবই বলে আসছে।

এর অর্থ চাষিদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। রাসায়নিক সার-বিষ, জল এবং শক্তির জন্য ভরতুকি বন্ধ করে জল, মাটি, জৈব বৈচিত্র সংরক্ষণ যারা করবে তাদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে উৎসাহ দিতে হবে। পুষ্টি ও গুণমান সম্পন্ন ফসলের উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন এবং রোগপোকা নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে। পরিবেশমুখী সুস্থায়ী কৃষি গবেষণা এবং উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। চাল ও গমের জমি আনুপাতিকভাবে কমিয়ে ছোট দানার ফসল, তেলবীজ, সবজি, ডাল উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি প্রাণীজ খাদ্যের দেশি জাতের উন্নয়ন এবং তার প্রসার করতে হবে। এক্ষেত্রে ছোট ছোট উৎপাদকদের চাষেই আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। 

প্রাথমিকভাবে সাশ্রয়ী দামে খাদ্য এবং পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ লক্ষ্যে কাজ করতে হবে সরকারকে। এসবই করতে হবে দেশের মোট কৃষিজ পণ্যের চাহিদাকে মাথায় রেখে। নাগরিকদের দায়িত্ববান ভোক্তা করে তুলতে ব্যাপক প্রচার এবং কিছু কিছু নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা করতে হবে।

অন্য আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি হল, খাবারের অপচয়। ফসল কাটার পর থেকে খাবারের থালা পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ খাদ্যের অপচয় হয়। যেদেশে একটা বিরাট অংশের মানুষ দুবেলা ভালো করে খেতে পায় না সেদেশে এই অপচয় একটা অপরাধ। এটা রুখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, ভোক্তারও। একবার ভাবা দরকার যদি এই অপচয়ের বেশ খানিকটা কমানো যায় তবে কত খাবার বাঁচানো যায়। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যারা সরাসরি কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করে না তারাই খাবারের অপচয় বেশি করে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হল জামাকাপড়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের পোষাকের প্রয়োজন। ভোগবাদের যুগে, দরকার না থাকলেও প্রচুর জামাকাপড় আমরা কিনি। যার মধ্যে বেশির ভাগই সিন্থেটিক কাপড়। এটা পরিবেশের পক্ষে সুস্থায়ী নয়। এই অপচয় কমাতে হবে। এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক তন্তুর জামাকাপড় ব্যবহারের ওপরে সরকারি এবং ব্যক্তিগত স্তরে উদ্যোগ নিতে হবে।

দূষণ, জলবায়ু বদল, ঘন ঘন বিপর্যয় এসবের জন্য অপরিমিত ভোগ এবং আকাশচুম্বী লোভই দায়ী। একথা আজ আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তাই কঠিন হলেও এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতেই হবে। সুস্থায়ী এবং সকলের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে এই কঠিন সিধান্ত নিতেই হবে। নিতে হবে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং সরকারি স্তরে।
সুব্রত কুণ্ডু
ফেব্রুয়ারি - ২০ ২৫-৭০, বাজেট, কৃষি অর্থনীতি  

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ