কৃষিতে যন্ত্রণার যন্ত্রায়ন

মেশিনে মেশিনে ভরে যাচ্ছে কৃষিক্ষেত্র 


ইদানিং বড় বড় হার্ভেস্টর মেশিন দিয়ে ধান কাটার পর জমিতে লম্বা নাড়া পড়ে থাকে। ফলে পরের চাষে অসুবিধা হয়। তাই গত ১০-১২ বছর ধরে চাষিরা এই নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে দেয়। হাত দিয়ে ধান কাটার সময় নাড়ার উচ্চতা খুবই কম রাখা হত। ফলে পরের চাষে জমি চষার সময় কোনো সমস্যা হত না। খড়ও নানা কাজে ব্যবহার হত। এখন নাড়া পোড়ানোর জন্য প্রচুর বায়ু দুষণ হয়। সম্প্রতি এ রাজ্যেও জমিতে নাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য শুধু বায়ু দূষণ নয়, জমিতে থাকা অসংখ্য অণুজীব মারা পড়ছে। জমির উর্বরতা কমছে।

অক্টোবর এবং নভেম্বরে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশে নাড়া পোড়ানোর জন্য রাজ্যগুলিতে এমন কী দিল্লি শহরেও বায়ু দূষণ খুবই বেড়ে যায়। মানুষের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিতে হয় দূষণের জন্য।

কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি এবং পরিবেশ মন্ত্রক পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লির প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে নাড়া পোড়ানো একেবারে বন্ধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য চারটি রাজ্যকে ক্রপ রেসিডিউ ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) প্রকল্পের অধীনে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ করছে। এর থেকে নাড়া তোলার মেশিন, ডিকম্পোজার ইত্যাদি ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে। জমি থেকে দূরে বাণিজ্যিকভাবে ধানের খড় থেকে বিদ্যুৎ, জৈব সার তৈরি এবং তার ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে।

হার্ভেস্টর মেশিন আগে ব্যবহার হত না। শ্রমের খরচ কমানোর জন্য এর ব্যবহার শুরু হয় খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে। কিন্তু এর জন্য যা দূষণ শুরু হয়েছে বা যেভাবে মাটির উর্বরতা কমছে তা ভয়াবহ। এসব বুঝে আবার মেশিন ব্যবহার করে দূষণ কমানোর কথা বলা হচ্ছে। কৃষির যন্ত্রায়ন এইভাবেই বাড়ছে। চাষ চলে যাচ্ছে কোম্পানিদের হাতে। অথচ দেশজ প্রক্রিয়ায় যে চাষ হয় তাতে মেশিনের রমরমা থাকে না। কৃষিজ বর্জ্য খুব ভালোভাবেই ব্যবহার হয়। দূষণ ছড়ায় না। গ্রামেই শ্রমের মাধ্যেমে লোকের কাজ মেলে। তবে আমাদের নীতিকারের, ছোটখাট ‘সমস্যা’ এড়াতে, যে নিদান দিচ্ছেন তা বড় বিপদ ডেকে আনছে। যারা এইসব যান্ত্রিক ব্যবস্থা এনে কৃষিকে শিল্পে পরিণত করতে চাইছেন – তারা কী একটু ভেবে দেখবেন। 

অগস্ট - ২৩, ২৯-১৩, কৃষি, অর্থনীতি

Comments

Popular posts from this blog

রক্তচাপ কমায় টম্যাটো

সার থেকে ক্যান্সার

আচ্ছে দিন