বিষমুক্ত বাজার
ফসল
বিষমুক্ত উপায়ে চাষ হচ্ছে। শ্রম লাগছে বেশি। ফলন রাসায়নিক চাষের তুলনায় কিছুটা কমই
হচ্ছে। আর বাজারে নিয়ে গেলে মহাজনের কাছে মুড়ি মুড়কির এক দাম। জৈব বলে বেশি দামে
বিকোচ্ছে না সগুনার শঙ্কর পাল, কদমপুরের
পরেশ মন্ডল বা চরজিজিরার গঙ্গাচরণ বিশ্বাস এবং আরো কয়েকজনের। এরা সবাই কিষান
স্বরাজ সমিতি নামের একটি কৃষক সংগঠনের সদস্য। নদীয়ার শান্তিপুর ব্লকের বিভিন্ন
গ্রামে যারা চাষিদের সংগঠিত করে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। আবার নিজেদের এবং প্রকৃতি ও
পরিবেশ সুস্থ রাখতে বিষমুক্ত ফসল চাষের প্রসার করে।
কিন্তু
চাষি যদি দাম না পায় তবে কীভাবে এই চাষের প্রসার হবে! বিষের চক্র থেকে চাষিরা কীভাবে বেরোবে? অনেক আলাপ আলোচনার পর তারা ঠিক করে কাছেই যেহেতু শান্তিপুর শহর, সেখানে তারা সরাসরি খরিদ্দারদের কাছে তাদের ফসল বিক্রি
করবে। কিষান স্বরাজ সমিতির মুখ্য সংগঠক শৈলেন চণ্ডী শান্তিপুর চকফেরা ঠাকুরবাড়ির
লোকদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের মন্দিরের চাতালে, দোকানের জায়গা ঠিক করে। সেখানে ১৮
জুন ২০১৮ থেকে প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে থেকে ৬টা অবধি
বিষমুক্ত ফসলের দোকান দেয় চাষিরা। প্রথমদিকে ৪-৫ জন চাষি তাদের সামগ্রী নিয়ে দোকানে আসতে থাকে। জনা ১৫ চেনা পরিচিত
খরিদ্দারও জুটে যায়। খোলা বাজারের দামেই তারা তাদের ফসল বিক্রি করতে থাকে। চাষিদের
যুক্তি, মহাজনের দামের থেকে অন্তত ৩৫,
৪০ শতাংশ দাম বেশি পাওয়া যায় খোলা বাজারের দামে বিক্রি করলে।
ধীরে
ধীরে জমে ওঠে এই বাজার। সবজি, ফল, চাল, ডাল, সরষের তেল, গাওয়া ঘি, মশলা সব বিক্রি করে তারা। প্রথম দিকে হাজার খানেক টাকার বিক্রি
থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় চার হাজার টাকার মতো সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে। বর্তমানে
নিয়মিত ১৮-২০ জন চাষি তাদের বিষমুক্ত
ফসল এখানে নিয়ে আসছে। নিয়মিত খরিদ্দারের সংখ্যাও প্রায় জনা পঞ্চাশেক। বাকি অনেকে
সময় সুযোগ পেলে, আসে এই বাজারে। সবাই মিলে এক বছরে প্রায় লাখ পাঁচেক টাকার ব্যবসা
তারা করেছে। জিনিসপত্র বিক্রি এবং হিসেব রাখার জন্য একজন সহকারী তারা রেখেছে। তাকে পারিশ্রমিকও দেওয়া
হচ্ছে।
এদের
ফসলের কোনো সরকারি প্রমাণপত্র বা জৈব সার্টিফিকেট নেই। তবে নিজেদের একটা দল আছে
যারা চাষির খেত ঘুরে দেখে। মাঝেমধ্যে কয়েকজন ক্রেতাকে মাঠে নিয়ে যায় ফসল দেখানোর
জন্য। তপন বোস, সুমন প্রামাণিক এদের থেকে নিয়মিত জিনিস কেনে। তাদের বক্তব্য, এই ফসল অনেকে বেশিদিন রাখা যায় - সহজে পচে না। স্বাদও অতুলনীয়।
আর চাষিরা বলে, খরিদ্দারদের সঙ্গে কথা বলতে এবং নিজের হাতে তৈরি ফসলের গুণগান
শুনতে তাদের ভালোই লাগে। শৈলেন চণ্ডী বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় এবং রানাঘাটে বিষমুক্ত ফসলের দোকান খোলার জন্য তাদের
কাছে প্রস্তাব আসছে। এজন্য আরো চাষিদের বিষমুক্ত ফসল চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। চাষি
এবং ক্রেতাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই ধরনের বিষমুক্ত বাজার উভয়ের জন্যই লাভজনক বলে
শ্রী চণ্ডী জানান। গত ১৭ জুন শান্তিপুরে বিষমুক্ত বাজারের প্রথম বর্ষপূর্তি পালন
করল তারা।
জুন ১৯২৪৯৭, কৃষি, স্বাস্থ্য
জুন ১৯২৪৯৭, কৃষি, স্বাস্থ্য
Comments
Post a Comment