নারী শিক্ষার প্রসার ক্রাই

‘পুরি পড়াই, দেশ কি ভালাই’ মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে ক্রাইয়ের দেশব্যাপী প্রচার 

বেসরকারি সংস্থা চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ বা ক্রাই মেয়েদের শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে এবং স্কুলে মেয়ে শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য একটি দেশব্যাপী প্রচারাভিযান, ‘পুরি পড়াই, দেশ কি ভালাই’, শুরু করেছে।

এই অভিযান ২০টি রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে। যার লক্ষ্য ২৪ জুন থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে মেয়ে শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রচার। উদ্যোগটি মেয়েদের সম্পুর্ণ শিক্ষা শেষ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। এতে তাদের স্কুলছুটের হার এবং এর কারণগুলিকে নির্দিষ্ট করা যাবে; পাশাপাশি স্কুলে তাদের নামভুক্তি; স্কুলে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি; এবং শিক্ষার সুযোগে অগ্রগতি ঘটবে বলে ক্রাই মনে করে।

শিশুদের বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯-এর লক্ষ্য হল, ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য সর্বজনীন শিক্ষাদান। এপ্রিল মাসে আইনটির ১৫তম বছর বয়স হবে। তবুও অনেক মেয়ে এখনও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।

মনে রাখা দরকার, জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০৩০ সালের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত শিক্ষার জন্য সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য-৪এর প্রতিশ্রুতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সর্বজনীন, বিনামূল্যে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রসারিত করার পথ প্রশস্ত করেছে।

যাইহোক, সর্বশেষ ইউনিফাইড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন (ইউডাইস) ২০২১-২২ সালের তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতে প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে মাত্র তিনজন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছয়। যদিও স্কুলে নামভুক্তি, পরিকাঠামো, এবং শিক্ষায় সুযোগের নিরিখে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ, সাংস্কৃতিক নিয়ম, লিঙ্গ বৈষম্য, বাল্যবিবাহ, স্কুলের অপ্রতুল সুবিধা, দীর্ঘ দূরত্ব এবং স্কুলে যাওয়ার পথে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ মেয়েদের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। এগুলি মেয়েদের স্কুলছুটের কারণ বলে, এই তথ্যে স্বীকার করা হয়েছে। এতে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতা বাড়াচ্ছে। ফলে শিশুশ্রম, কম বয়সে বিয়ে, কিশোরী অবস্থায় মা হওয়া, নানা শোষণমূলক কাজে অংশগ্রহণ, এমন কী পাচারও হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই প্রচারাভিযানের গুরুত্ব তুলে ধরে ক্রাই তাদের বক্তব্যে বলেছে, মেয়েদের কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর অবধি শিক্ষা নিশ্চিত করার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে, তাদের ক্ষমতায়ন এবং দেশের উন্নয়ন। তাই মেয়েদের শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সরকারি ব্যবস্থা, আর্থিক সহায়তা, উন্নত পরিকাঠামো তৈরি এবং বাল্য-বিবাহের বিরুদ্ধে আইনের দৃঢ় প্রয়োগ জরুরি। সেজন্য মেয়েদের শিক্ষাকে ঘিরে গণসচেতনতা এবং সামাজিক অনুরণন তৈরি না করে, এগুলির কোনোটাই অর্জন সম্ভব নয়।

তারা আরো বলেছে, মেয়েদের পূর্ণ শিক্ষা, আন্তঃপ্রজন্মীয় দারিদ্র্যের চক্র ভাঙ্গার অন্যতম কার্যকর উপায়। শিক্ষিত মেয়েরা তাদের সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারে এবং তাদের সন্তানদের জন্য আরও ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারে।

ইউডাইস ২০২১-২২-এর তথ্য অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ৫৮.২ শতাংশ মেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নথিভুক্ত হয়। অন্য কথায়, ভারতে প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে মাত্র তিনজনই এগারো এবং বারো ক্লাস অবধি পড়তে পারে। এদের মধ্যে আবার প্রতি তিনজনের একজন মাধ্যমিক অবধি পৌঁছয় না। অন্য হিসেবে এই বয়েসের প্রতি আট জন মেয়ের মধ্যে একজন (বা ১২.২৫ শতাংশ) স্কুলছুট হয়ে যায়।                       সূত্রঃ ক্রাই

জুলাই - ২৪, ৩০ - ০৪, নারী, শিক্ষা

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ