গরমে চিন্তিত ভারত
৭১ শতাংশ ভারতীয় বিশ্বাস করে, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি তাদের এলাকার আবহাওয়াকে প্রভাবিত করছে। একই সময়ে, ৭৬ শতাংশ মানুষ একমত যে, ক্রমশ বাড়তে থাকা তাপমাত্রা দেশের বর্ষাকে প্রভাবিত করে। আর এই বাড়তে থাকা তাপমাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের ৯১ শতাংশ মানুষ, যাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই এ নিয়ে খুবই চিন্তিত।
যাইহোক, মাত্র ৩৩ শতাংশ ভারতীয় স্বীকার করেছে, তারা সপ্তাহে অন্তত একবার মিডিয়াতে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে শুনেছেন। ইয়েল প্রোগ্রাম অন ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিউনিকেশন এবং সি ভোটার ইন্টারন্যাশনাল তাদের নতুন রিপোর্ট "ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন ইন্ডিয়ান মাইন্ড" এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
এটি লক্ষণীয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এমন একটি বাস্তবতা, যা চাইলেও অস্বীকার করা যায় না। পরিসংখ্যানও এর সাক্ষ্য দেয়। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তাপমাত্রা নতুন শিখরে পৌঁছে ছিল, যা স্পষ্টভাবে দেখায় যে আমাদের গ্রহ আগের চেয়ে দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এর প্রভাব আবহাওয়া, জলবায়ু, বৃষ্টি, মৌসুমী দুর্যোগ এমনকী সাধারণ মানুষের পকেটেও পড়ছে।
সাধারণ ভারতীয়রাও বিশ্বাস করে, জলবায়ুর পরিবর্তন মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করছে। এই সমীক্ষায় মতামত দেওয়া বেশিরভাগ ভারতীয়ই স্বীকার করেছেন যে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, যা দেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি ডেকে আনছে। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে জনগণ সমর্থন করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন ২০২৪ সাল সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আরো মনে করছে, ২০২৪ পাঁচটি সবথেকে উষ্ণতম বছরের অন্তর্ভুক্ত হবে। এবছর এপ্রিল এবং মে মাসের শুরুতে, এই দেশ এবং বিশ্বের অনেক জায়গায় তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছিল। বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ সুদানে এর জেরে স্কুলও বন্ধও রাখতে হয়েছিল।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগও বলেছে, এই বছরটির এপ্রিল মাস, ১৯০১ সালের পর পূর্ব ভারতের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস ছিল। একইভাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে পশ্চিমবঙ্গে গত ১৫ বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক তাপপ্রবাহের দিন রেকর্ড করা হয়েছিল। এমনকী ওড়িশায়, এপ্রিল মাসে তাপ পরিস্থিতি গত নয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ছিল। ক্লাইমেট ট্রেন্ডস নামে একটি গবেষক সংস্থা এও বলেছে যে, জলবায়ু বদলের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের স্থানীয় আবহাওয়ার নানা রকমের পরিবর্তন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হলে পরবর্তিতে, সময়ের আগেই গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জলবায়ু বদলের কারণ হিসেবে দেশের ৫২ শতাংশ মানুষ মনে করে, এর জন্য মানবিক কার্যকলাপ দায়ী। আর ৩৮ শতাংশ মানুষ মনে করে, প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে জলবায়ু বদল ঘটে। ভারত ইতিমধ্যেই চরম তাপ, বিধ্বংসী বন্যা, শক্তিশালী ঝড় ইত্যাদির মতো জলবায়ু প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। তবুও দেশের অনেকেই বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ তেমন কিছু জানে না।
সমীক্ষায় প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নিয়ে আসার জন্য ভারত সরকারের 'নেট জিরো' লক্ষ্যকে সমর্থন করেছে। একইভাবে, ৮৪ শতাংশ ভারতীয় সমীক্ষায় নতুন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিষিদ্ধ করা, যেসব প্ল্যান্ট কয়লায় চলে তা বন্ধ করা এবং সৌর ও বায়ু শক্তির ব্যবহারকে সমর্থন করেছে।
৭৪ শতাংশ মানুষ মনে করে, বিশ্বের উষ্ণতা কম করতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। আর ৫১ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে, এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে, ২৩ শতাংশের মতে এটি কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোনো প্রভাব ফেলবে না। যেখানে ২১ শতাংশ মনে করেন এতে অর্থনীতির ক্ষতি হবে এবং চাকরি চলে যাবে।
সমীক্ষায় অধিকাংশ মানুষ নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতিও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ মনে করেন, দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারকে উন্নত করা উচিত। যেখানে মাত্র ১৪ শতাংশ ভারতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রচারের কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়, ৭৫ শতাংশ মানুষ বিশ্ব উষ্ণায়ন-এর খরচ কমাতে শক্তি, দক্ষ যন্ত্রপাতি এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য আরো বেশি অর্থ দিতে ইচ্ছুক।
সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর ২০২৩-এর মধ্যে পরিচালিত ২,১৭৮ জন ভারতীয়ের উপর একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে এই ফলাফল পাওয়া গেছে। এই সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত সকলের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি।
জুন - ২৪, ২৯ - ৭৪, জলবায়ু বদল
Comments
Post a Comment