ইটের বদলে প্রকৃতি পাটকেল ছুঁড়ছে

১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির হলেই পৃথিবী বসবাসের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে


জলবায়ু সংকটের কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পথে হাঁটছে পৃথিবী। সম্প্রতি এমন তথ্যই উঠে এসেছে পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের এক গবেষণায়। এই গবেষণা অনুযায়ী, অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে জলবায়ু বদলের প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে যেগুলি হল— গ্রিনল্যান্ডের বরফের আচ্ছাদনে ধ্বস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে স্রোতের বিপর্যয়, বিশ্বব্যাপী অনিয়মিত বর্ষা এবং উত্তর মেরুতে কার্বন প্রধান হিমায়িত অঞ্চলের গলে যাওয়া। এর ফলে আর মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির হলেই পৃথিবী বসবাসের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

গোটা মানবসভ্যতার বেড়ে ওঠার গল্প মূলত অনুকূল তাপমাত্রার মধ্যেই রচিত হয়েছে। অন্যদিকে তাপমাত্রার কারণে একটা দিক ভারসাম্যহীন হয়ে উঠলে, আবশ্যিকভাবে অন্য কোনো দিকে তার প্রভাব পড়বে। যেমন বরফ গলে যাওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। কিন্তু শিল্পবাদের ফলে আমরা যেভবে এগিয়ে চলেছি, তাতে খুব শিগগিরই পৃথিবীর তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে— এমনটাই মনে করেন গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক জোহান রকসট্রম।

অ্যামাজনের বর্ষাবন বা রেইনফরেস্ট ভঙ্গুর হয়ে ওঠার নিদর্শনও মিলেছে এই গবেষণায়। গবেষকেরা বলেছে, এর গভীর প্রভাব অবশ্যই পড়বে জলবায়ু ও জীববৈচিত্রের উপর। এর ফলে পরিবর্তিত হয়ে যাবে গ্রিনল্যান্ডের বরফের আচ্ছাদন এবং মেরু অঞ্চলের স্রোতপ্রবাহ।

বিশ্বব্যাপী যে হারে কার্বন নির্গমন হচ্ছে, তা বরাবরই আশঙ্কাজনক। সাম্প্রতিক সময়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রসঙ্গ আনা হলেও, তা আশানুরূপ কার্যকর হয়নি। এমনকি জলবায়ু সম্পর্কিত প্যারিস চুক্তিও মানা হচ্ছে না। কোভিড-১৯ তার সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তৈরি সামগ্রী, তার পরিবহন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন বাড়ছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই আরো কিছু বিরূপ পরিবর্তন আমরা দেখতে পাব। এগুলি হল ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রবাল প্রাচীরগুলির মৃত্যু, পশ্চিম আফ্রিকার বর্ষাকালের চিত্র বদলে যাওয়া এবং সমুদ্রের অক্সিজেন দ্রুত ক্মে যাওয়া। এরই মধ্যে ভারতীয় অঞ্চলে ঋতু পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে দিয়েছে।

টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের অধ্যাপক নিকল্যাস বোয়ার্স এ গবেষণাকে গুরুত্বপূর্ণ সূচক বলে মনে করেন। তিনি বলেন, প্রকৃতির প্রতি মানুষের ছুড়ে দেয়া ইটকে প্রকৃতি পাটকেল বানিয়ে ফেরত দিচ্ছে।

মে - ২৩, ২৮-৬৫, জলবায়ু বদল

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ