চাষির আয় কমছে ডুবছে গ্রামীণ অর্থনীতি

দ্বিগুণ আয়ের স্বপ্ন দূর অস্ত, বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাষির প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার কথা লিখছেন সুব্রত কুণ্ডু 


২০২২ ছিল চাষির আয় দ্বিগুণ হওয়ার বছর। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬-এ, উত্তর প্রদেশের বেরেলির কৃষক সমাবেশে, প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা করেছিলেন। এজন্য অশোক দলওয়াইয়ের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। ১৪ টি খণ্ডে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার বেশ মোটাসোটা প্রস্তাব জমা করেছিল এই কমিটি। আর চাষির আয় বলতে কী বোঝায়, সে সম্পর্কে কোনো ‘স্পষ্টতা’ না থাকায়, এ নিয়ে নীতি আয়োগের রমেশ চন্দ্র একটি পলিসি পেপার বা নীতিপত্র প্রকাশ করেন। এই পেপার অনুযায়ী আয়ের ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ২০১৫-১৬ সালকে ধরা হয়েছিল। সেই হিসেবে ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১-এর মধ্যে, চাষির আয় গড়ে প্রতি বছর ১.৫ শতাংশ হারে কমেছে।

অশোক দলওয়াই কমিটি, ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও) এর সিচুয়েশন অ্যাসেসমেন্ট সার্ভে (এসএএস)’র ব্যবহৃত 'চাষির’ একটি বিস্তৃত সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিল। এই হিসেবে চাষি পরিবারের সমস্ত আয় - ব্যবসা থেকে আয়, অ-কৃষি আয় এবং শ্রম মজুরিও ধরা হয়। এসএএস-এর ওপর ভিত্তি করে হিসেব করলে দেখা যায়, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৮-১৯ এর মধ্যে ফসল চাষ থেকে চাষি পরিবারের আয় বার্ষিক ১.৫ শতাংশ হারে কমেছে। এই হিসেবে যদি পশু সম্পদ থেকে আয়কে যোগ করা হয়, তবে তা বার্ষিক ০.৬ শতাংশ হারে বাড়ে। আর অ-কৃষি আয় যোগ করলে, আয় বাড়ে বার্ষিক ২.৮ শতাংশ হারে। (২০২২-২৩-এর কোনো হিসেব এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এটা বলা যায়, এই হার খুব একটা বাড়ার সম্ভাবনা নেই)। কৃষি এবং অকৃষি কাজের হিসেব ধরলেও চাষি পরিবারের আয় দ্বিগুণ হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তবে অ-কৃষি কাজ থেকে আয় এটা প্রমাণ করে যে, কৃষি পরিবারগুলি ক্রমশ চাষের ওপর ভরসা হারিয়ে ফেলছে। কৃষিকাজ ছেড়ে দেওয়া চাষিদের হিসেব দেখলেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

কৃষি পরিবারের আয়ের তথ্যের অন্য উৎস হল নাবার্ডের অল ইন্ডিয়া ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সার্ভে (বা নাফিস)। যদিও এখানে কৃষি পরিবার এবং আয়ের সংজ্ঞা এসএএস-এর থেকে আলাদা। নাফিসের তথ্য অনুযায়ী, সমস্ত উৎস থেকে কৃষি পরিবারের বার্ষিক আয় ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ বেড়েছে ১.৭ শতাংশ হারে। এর আগে নাফিসের হিসেব অনুযায়ী ২০১২-১৩ থেকে ২০১৫-১৬ অবধি বাষিক আয় বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৮ শতাংশ। অর্থাৎ এই হিসেবে পরবর্তি বছরগুলিতে চাষি আয় কমেছে।

তথ্যের অভাবের কারণে গত পাঁচ বছরে চাষিদের নিট আয় কী হয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে বলা বেশ মুশকিল। কিন্তু একাধিক সূত্র ব্যবহার করে যেটুকু অনুমান করা যায় তা হল, উৎস বা পদ্ধতি নির্বিশেষে ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের পর দেশে দ্বিগুণ তো দূর চাষিদের আয় কমেছে।

এখানে সমস্যা শুধু চাষিদের আয় কমা নয়। আয় কমেছে গ্রামীণ শ্রমিকদেরও। গ্রামীণ প্রকৃত মজুরিও গত পাঁচ বছরে কমছে। নিদির্ষ্ট ভাবে বললে চারভাগের তিনভাগ গ্রামীণ শ্রমিকের আয় কমে যাচ্ছে।

এই আয় কমাও গ্রামীণ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এতে গ্রামীণ মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদা কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এর সঙ্গে ক্রমশ বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির জন্য সামগ্রিক অর্থনীতির সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। আর সেজন্যই গ্রামীণ অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে অর্থবহ পরিকল্পনা তৈরি এবং তার প্রয়োগ দরকার।

মতামত নিজস্ব

জানুয়ারি - ২৩, ২৮-৩৮, চাষ, অর্থনীতি

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ