পাশ হল বিশ্ব জীববৈচিত্র ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি

কপ-১৫
প্রতিবেশগত সভ্যতা: পৃথিবীর সব জীবনের জন্য একটি সম্মিলিত ভবিষ্যৎ


পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কপ-১৫ সম্মেলনে গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক (জিবিএফ) নামে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৩০ শতাংশ জীব বৈচিত্র রক্ষায় কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত চার বছর ধরে দুই শতাধিক দেশের প্রতিনিধিরা এই চুক্তি তৈরি নিয়ে দর কষাকষি করছিলেন। বেশিরভাগ দেশ এ নিয়ে রাজি থাকলেও, সবথেকে জীববৈচিত্র বিনাশকারী ধনী দেশগুলি ক্ষতিপূরণ তহবিলে অর্থ দিতে রাজি হয়নি। তবে শেষমেশ ১৯০টি দেশের পরিবেশমন্ত্রীদের বৈঠকের মধ্যে দিয়ে কপ-১৫ একটি সুরাহায় পৌঁছায়।

চুক্তিতে পৃথিবীর ভূমি ও সমুদ্র রক্ষা, ক্ষতিকর ভরতুকি কমানো এবং ক্ষতিকর প্রজাতির মোকাবিলা করা মূল লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জিবিএফ-এ মূল ৪টি লক্ষ্যের অধীনে ২৩টি উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই মহা সম্মেলনের মুল প্রতিপাদ্য ছিল -‘প্রতিবেশগত সভ্যতা: পৃথিবীর সব জীবনের জন্য একটি সম্মিলিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা’। গত ৬-১৯ ডিসেম্বরে অবধি কানাডার মন্ট্রিওলে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন।

জিবিএফ চুক্তিতে, সমবেতভাবে দেশগুলি বার্ষিক ৫০০ বিলিয়ন ডলার মুল্যের ক্ষতিকর সরকারি ভরতুকি বাতিল করবে বলে ঠিক হয়েছে। এই ভরতুকি উন্নত দেশগুলিকে ২০২৫ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২০ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি) ডলার করে কমাতে হবে।

চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হলো, জীবদের বিলুপ্তি ঠেকানো, বাস্তুসংস্থান নষ্ট হয় এমন পদক্ষেপ থেকে সরে আসা, জীব বৈচিত্র রক্ষায় টেকসই বন্দোবস্ত নিশ্চিত করা, আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ, বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে ওষুধ তৈরির প্রকল্প নেওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ভরতুকি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

দেশগুলি এই দশকের শেষ নাগাদ অন্তত ৩০ শতাংশ ভূমি ও মহাসাগর সংরক্ষণের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। কিন্তু জেলে, আদিবাসী ইত্যাদি প্রান্তিক মানুষেরা বলছে, তারা সাগর বা বনভূমির ক্ষতি করেননি। অথচ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা তাদের শাস্তি দেওয়ার নামান্তর।

একদিকে ক্ষতিকর ভরতুকি কমানোর কথা বলা হলেও ভারতের মত দেশ বলেছিল, কৃষিতে এবং কীটনাশকের ক্ষেত্রে ভরতুকি কমানো সিদ্ধান্ত অপ্রয়োজনীয়। অনেক দেশের মত ভারতের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আর তাই, এই ভরতুকি ছেঁটে কৃষিজীবী মানুষকে বিপদে ফেলার কোনো মানে হয় না। সে জন্য জিবিএফ এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে ক্ষতিকর ভরতুকি জীব বৈচিত্রের ক্ষতি করলেও, ভারতসহ অন্যান্য দেশে রাসায়নিক কৃষির জন্য ভরতুকি বজায় থাকবে। জিবিএফ চুক্তিতে অনেক ভালো ভালো কথা লেখা থাকলেও, কৃষি ভরতুকি এই চুক্তির সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। 

ডিসেম্বর - ২২, ২৮-৩৫, জীব বৈচিত্র, কপ ১৫

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ