জলবায়ু বদলঃ ভুগছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া
২০২২ সালে জলবায়ু বদলে সব থেকে ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, এবছর প্রাক-বর্ষাকাল ভারত ও পাকিস্তানে খুবই গরম ছিল। এই গরম আবহাওয়া ফসল উৎপাদন কমার অন্যতম প্রধান কারণ।
উৎপাদন কমায় ভারত এখন চাল এবং গম রফতানি বন্ধ রেখেছে যা আন্তর্জাতিক খাদ্য বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। খাদ্য ঘাটতি বাড়ছে। পাকিস্তানে শুধু অগস্ট মাসে স্বাভাবিকের থেকে ২৪৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বন্যাও হয়েছে। এই বন্যায় সে দেশের মোট ৭৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার প্লাবিত হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ। এছাড়া ৭৯ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
এবারে বর্ষা জুড়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বন্যা এবং ধ্বস নেমেছিল। এর জন্য প্রাণহানি হয়েছিল ৭০০ জনের। এছাড়া বজ্রপাতের কারণে মারা গিয়েছিল ৯০০ জন। শুধুমাত্র আসামে বন্যার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল ৬ লক্ষ ৬৩ হাজার মানুষ। বাংলাদেশে গত কুড়ি বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল এই বছরে। ৭২ লক্ষ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বাস্তুচ্যুত হয়েছিল ৪ লক্ষ ৮১ হাজার মানুষ। কক্সবাজারে, ভারী বর্ষণে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বন্যা কবলিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট ল্যাব-এর প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলবায়ু বদলের জন্য, শতাব্দীর শেষ নাগাদ ভারতের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা, প্রাক শিল্প বিপ্লব সময়ের গড় তাপমাত্রার থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে বর্তমান গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ২৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা শতাব্দীর শেষ নাগাদ ৩ ডিগ্রি বেড়ে হবে ২৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে, দিল্লি এবং আহমেদাবাদের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বাড়তে পারে ৩.৫ ডিগ্রি আর ফরিদাবাদ এবং জয়সলমেরের বাড়তে পারে ৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু তাই নয়, রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত বছরের ১৮১ দিন অবধি দেশের গড় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকবে। এই ক্ষেত্রে, দিল্লিতে বছরের ২১৭ দিন এবং কলকাতায় ১৭৮ দিন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। একই রকমভাবে দেশের অন্যান্য জায়গার গড় সম্ভাব্য তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এই রিপোর্টে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এজন্য স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে, বর্তমানের থেকে এদেশে প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় মৃত্যুর হার বাড়বে গড়ে ২৩ জন করে। এই সংখ্যা দিল্লিতে ৫৫, ফরিদাবাদে ৬৬, মিরাটে ৭০, জয়পুরে ৫৪, লুধিয়ানায় ৭৯, লখনউয়ে ৫৯, এলাহাবাদে ৮৪, বারাণসী ৭৫ এবং জয়সলমেরে ৮১ জন হতে পারে। শুধু তাই নয়, এর ফলে দেশে জ্বালানি ব্যবহার প্রচুর বাড়বে। অনুমান, দেশে মাথাপিছু শক্তি খরচ বাড়বে ১.৩ গিগাজুল। রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, শতাব্দীর শেষ নাগাদ, বছরে কর্মী পিছু গড় কাজের সময় ৬১.৬ ঘন্টা কমে যেতে পারে, যা তাদের আয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে।
শুধু তাই নয়, রিপোর্টে বলা হয়েছে, কৃষি, নির্মাণ, খনি এবং উত্পাদক শিল্পগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে। কারণ এসবই জলবায়ুর উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আর তাই আগামী বছরগুলিতে বিশ্বজুড়ে বৈষম্য আরো বাড়বে।
রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে, এর প্রভাব অঞ্চলভেদে একই রকম হবে না। আর পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য দেশগুলির কী সংস্থান আছে এবং কতটা সদিচ্ছা রয়েছে, তার উপরও এটি নির্ভর করবে।
নভেম্বর - ২২, ২৮-২৫, জলবায়ু বদল
Comments
Post a Comment