কার্বনের করাল গ্রাস

আমাদের সব কাজেই নির্গত হচ্ছে কার্বন লিখছেন সুব্রত কুণ্ডু



আপনি নিশ্চয়ই জলবায়ু বদল সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছেন। হয়তো শুনেছেন কার্বন ফুটপ্রিন্ট বা কার্বন পদচিহ্নের কথা। কিন্তু এই পদচিহ্ন বা পায়ের ছাপ আসলে কী? আমাদের কাজেকর্মে পরিবেশে কার্বনের যে ছাপ পড়ছে, তা বোঝাতে ব্যবহার হয় কার্বন ফুটপ্রিন্ট শব্দটি। আমরা যা করি, তার থেকেই নির্গত হয় কার্বন। এই কার্বন হল কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) গ্যাসের একটি উপাদান। জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন পেট্রলিয়াম, কয়লা ইত্যাদি পুড়িয়ে আমরা প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দিচ্ছি কার্বন। এগুলি যত বেশি পোড়াচ্ছি আমাদের (কার্বন ফুটপ্রিন্ট) পায়ের ছাপ তত বড় হচ্ছে।

যারা নিজেদের গাড়ি চড়ে তারা হয়তো ভাবছে, ইঞ্জিনের চালানোর জন্য তেল পুড়িয়ে যতটুকু কার্বন বের হচ্ছে সেটুকু কার্বনই তারা পরিবেশে ছাড়ছেন। না এটা ঠিক নয়। খনির তেল তোলার থেকে গাড়ির ট্যাংক হয়ে ইঞ্জিন চলার ফলে যে কার্বন নির্গত হচ্ছে পুরোটাই কার্বন ফুটপ্রিন্টের অংশ। খনি থেকে তেল তোলা, তার শোধন, তেলের পাম্প অবধি তার পরিবহন – সব ক্ষেত্রেই জ্বালানি পুড়ছে। কার্বন বের হচ্ছে। এছাড়া গাড়ি তৈরিতেও কার্বন নির্গত হচ্ছে পরিবেশে। আপনি মনে হয় এতটা ভাবেননি। যতটা ভেবেছিলেন তার থেকে অনেক বেশি কার্বন নির্গত হচ্ছে আমাদের কাজে।

তাই প্রত্যেক কাজ এবং আপনার মালিকানায় থাকা সব সামগ্রীর নিজস্ব কার্বন ফুটপ্রিন্ট রয়েছে। ধরুন কেউ বই পড়ছে। বই তৈরির জন্য কাগজ, তার ছাপাই, বাঁধাই, সরবরাহ থেকে পাঠকের হাতে আসা অবধি সব কাজেই কার্বনের পায়ের ছাপ। আমরা যে ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজছি অথবা যোজন দূর থেকে আনা ফল, খাবার খাচ্ছি – তাতেও বের হচ্ছে কার্বন। তাহলে যা দাঁড়াল, কার্বন নির্গমন না করে আমরা কোনো কাজই করতে পারি না। এবার হয়তো অনেকে বলবে, সব কাজে যখন কার্বন বেরোচ্ছে তখন আমাদের আর কি করার আছে! যেমন চলছে তেমন চলুক। না, আমাদের অনেক কিছু করার আছে কার্বন পায়ের ছাপ ছোট করতে। লাভ ও লোভের উন্নয়নের বিপরীতে আমাদের কাজ, পছন্দ, পরিমিতি বোধ, এই পদচিহ্নকে অনেকটাই ছোট করতে পারে।

জুন - ২২, ২৭-৭০, পরিবেশ, দূষণ

Comments

Popular posts from this blog

লিঙ্গসাম্যের দিকে এগোচ্ছে দেশ

পারম্পরিক জ্ঞানের তথ্যায়ন

দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ