লাভের সুস্থায়ী চাষ
ইকোসিস্টেম বা বাস্তু-ব্যবস্থা এবং
জীবের সঙ্গে তার পরিবেশ-প্রতিবেশকে বুঝে দীর্ঘস্থায়ী এক কৃষি-ব্যবস্থার নির্মাণকেই
সাসটেনেবল অ্যাগ্রিকালচার সিস্টেম বা সুস্থায়ী কৃষি-ব্যবস্থা বলা যেতে
পারে। সুস্থায়ী কৃষি প্রসারের মূল তিনটি দিক হল, ১
- চাষি এবং চাষের কাজে সামগ্রী, শ্রম ও পরিষেবা দানকারীর আর্থিক লাভ এবং জীবন
জীবিকার সুরক্ষা। ২ – প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভালো করার তাগিদ। ৩- এই চাষ
প্রসারে সামাজিক দায়বদ্ধতা।
সুস্থায়ী চাষ করে
চাষি যাতে তার প্রয়োজনীয় রোজগার করে, তা নিশ্চিত করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। ফলন
বৃদ্ধি, চাষের খরচ কমানো ও ফলনের ভালো দাম পেলে চাষির আয় বাড়ে। চাষি লাভ না করেও
বছরের পর বছর সুস্থায়ী চাষ করে যাবে এমন আশা করা,মূর্খের স্বর্গে বাস করারই
নামান্তর।
ফসলের দাম ঠিক করার সময়
আমরা পরিবেশগত খরচকে ধরি না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধান বা চালের উৎপাদনে জল ও
রাসায়নিক সার, বিষ প্রচুর ব্যবহার হয়। কৃষিবিজ্ঞানীদের হিসেবে দেখা গেছে ১ কেজি
ধান উৎপাদনে ৫০০০ লিটার জল লাগে। রাসায়নিক সার ও বিষ ব্যবহারের কারণে মাটি, জল,
হাওয়ায় থাকা প্রাণ নষ্ট হয়, দূষিত হয় পরিবেশ। এসবের দাম যদি ধরা হয়, তবে ১ কেজি
ধানের উৎপাদনে খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অনুমান করতে পণ্ডিত হওয়ার দরকার নেই।
সুস্থায়ী কৃষিতে
শ্রমের প্রয়োজন বেশি কিন্তু চাষের মোট খরচ কম। চাষিরা এ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।
কিন্তু আয়-সুরক্ষার অভাবে তারা সুস্থায়ী চাষের ‘ঝুঁকি’ নিতে চায় না। এটা শুধু কথার
কথা নয়। কারণ চলতি চাষে সার, বিষ, জল ইত্যাদি ইন্ধনের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে, কিছু
চাষি সামান্য জমি হলেও, রাসায়নিক ছাড়াই চাষ করতে শুরু করেছে নিজস্ব জৈব ইন্ধন (সার
ইত্যাদি) জোগানের ওপর ভিত্তি করে। পারিবারিক শ্রমকে মাথায় রেখে।
এটাতো গেল শুধু
চাষের ইন্ধন এবং উৎপাদন নিয়ে কথা। চাষের সামগ্রীর বণ্টন, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন,
বাজার – প্রত্যেকটি নিয়েই পলকা এক চাষ-ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এসবই একই রকম থাকবে আর
সুস্থায়ী চাষ, সুস্থায়ী চাষ বলে চিৎকার করলেই চাষ সুস্থায়ী হয়ে যাবে, এমন
কল্পলোকের বাসিন্দাদের দিয়ে আর যাই হোক চাষ সুস্থায়ী হবে না। আর তাই চাষসহ তার
বণ্টন, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন, বাজার ঘিরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রয়োগ এবং তার ফলাফল
নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলাপ-সংলাপ করতে হবে সামগ্রিক সুস্থায়ী কৃষিনীতি গ্রহণের জন্য।
এখানে প্রথম বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করলাম। বাকি দুটি আপনাদের জানা…।
সুব্রত কুণ্ডু
মার্চ - ২০ ২৫-৭২, কৃষি, সুস্থায়ী চাষ
মার্চ - ২০ ২৫-৭২, কৃষি, সুস্থায়ী চাষ
Comments
Post a Comment